নির্ভীক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মজলুম জননেতা অধ্যাপক গোলাম আযম। শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণেই ৫ম বারের মতো কারাগারে গেলেন বর্ষীয়ান জননেতা, ভাষা সৈনিক জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম। এর আগে ভাষা আন্দোলনের জন্য ১৯৫২ ও ১৯৫৫ সালে দুইবার, ১৯৬৪ সালে স্বৈরাচারী আইয়ুবের আমলে একবার, ১৯৯২ সালে নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে একবার আর সর্বশেষ গত ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশে কারাবরণ করেন এই নেতা। প্রিজন সেলে থাকা অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় তিনি শাহাদাতবরণ করেন।
২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই তার কারাবরণের কথা তুলে ধরেন। সে সময় তিনি বলেন, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় প্রথম আমি রংপুরে গ্রেফতার হই। ভাষা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ততার জন্যই আবারো ১৯৫৫ সালে আমি গ্রেফতার হই। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সরকার যখন জামায়াতে ইসলামীকে বেআইনী ঘোষণা করে। তখন আমি লাহোরে ছিলাম কেন্দ্রীয় শূরার সভার জন্য। সেখানে আমি আবারো গ্রেফতার হই। এর ২ মাস পর আমাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। এ সময় ৫ মাস আমি জেলে ছিলাম। একটা কথা আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই, তাহলো জেলে যাওয়ার পর প্রত্যেক বারই আমি উচ্চ আদালতে রিট করে মুক্ত হই।
সর্বশেষ ১৯৯২ সালে আমাকে গ্রেফতার করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে আমার নাগরিকত্ব বাতিল করে। ১৯৯২ সালে বিএনপি আমাকে বিদেশী নাগরিক হিসেবে গ্রেফতার করে। এ সময় আমি ১৬ মাস জেলে ছিলাম। ১৯৯৩ সালের জুন মাসে বিদেশী নাগরিক হিসেবে যে মামলা করে সরকার, এতে তারা হেরে যায়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে আমি মুক্ত হই। কিন্তু তখনও নাগরিকত্ব পুনর্বহালের মামলা বাকী ছিল। এ ব্যাপারে দুই বিচারক দুই রকম রায় দেন। এরপর তা তৃতীয় বিচারপতির কাছে গেলে তিনি আমার পক্ষে রায় দেন। সরকার এর বিরুদ্ধে আপিল করে। এক বছর পর ১৯৯৪ সালের ২২ জুন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৫ জন বিচারপতির সমন্বয়ে পুর্ণাঙ্গ বেঞ্চে সর্বসম্মতিক্রমে আমার নাগরিকত্ব বহালের আদেশ দেন এবং শেখ মুজিবুর রহমানের অর্ডারকে বেআইনী ঘোষণা করেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর আমি নাগরিকত্ব ফিরে পেলাম।
সেই সাক্ষাৎকারেই আবারো জেলে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেছিলেন, মু’মিনের জন্য নিয়ম হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবে, কিন্তু তার চেয়ে বেশি কাউকে ভালোবাসতে পারবে না। এটাই আল্লাহর নির্দেশ। আর ভয়, আল্লাহ ছাড়াতো কাউকে ভয় পাওয়া জায়েজই নেই। মু’মিন আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পেতে পারে না। আমি উদ্বিগ্ন নই। আমি মৃত্যুকে ভয় করি না। মৃত্যুকে ভয় পাবো কেন? মু’মিনতো মৃত্যু কামনা করে। কেননা মৃত্যুর পর আল্লাহর কাছে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। তাই মৃত্যুকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে ওনাকে হত্যা করার পাঁয়তারার সময় গ্রেপ্তারের প্রাক্কালে সাংবাদিকরা যখন জিজ্ঞাসা করেছিল আপনার ভয় করছে না? তিনি জবাব দিলেন, তিনি জবাব দিলেন,ভয়? ভয় কিসের? ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে শাহাদাতের কামনা করেছি সারা জীবন…আর অন্যায়ভাবে যদি মৃত্যু দেয়া হয় শহীদ হওয়ার গৌরব পাওয়া যায়… আল্লাহকে ছাড়া কাউকে “ভয় করাতো জায়েজই নাই, আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করার অনুমতি নাই।”
অধ্যাপক গোলাম আযম ২৩ অক্টোবর ২০১৪ তারিখের রাতে পিজি হাসপাতালে রাত ১০ টায় বন্দি থাকা অবস্থায় শাহদাতবরণ করেন। ২৫ অক্টোবর ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বাইতুল মুকাররমে জোহরের নামাজের পর তার জানাযার নামাজ আদায় করা হয়। তার জানাযায় লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগম ঘটে। জানাযার ইমামতি করেন গোলাম আযমের সন্তান আবদুল্লাহিল আমান আযমী। জানাযার পর পুলিশি নিরাপত্তায় তাঁর মরদেহ মগবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। মগবাজারে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।