৪ জুলাই ১৯৫২ – ১১ এপ্রিল ২০১৫
শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান রহ.। বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন প্রতিভাবান যোদ্ধা। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ২য় কেন্দ্রীয় সভাপতি। তাঁর চমৎকার লেখনির মাধ্যমে আমরা সমাজ, সভ্যতা ও পাশ্চাত্যের নানা অসঙ্গতির ইতিহাস জানাতে সক্ষম হয়েছি। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুণগত পরিবর্তন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার লড়াইয়ে তিনি ছিলেন অন্যতম। দেশে-বিদেশে সভা-সেমিনারে তাঁর ব্যতিক্রমধর্মী উপস্থাপনা সেক্যুলার ও বামপন্থীদের ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপারে হিংসা বাড়িয়ে দিয়েছে। এভাবেই তিনি জালিমদের হিটলিস্টে চলে আসেন। তিনি ছিলেন একাধারে একজন রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, লেখক, ইসলামী ব্যক্তিত্ব, সদালাপী প্রাণপুরুষ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী আদেশে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের নামে জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বিশিষ্ট সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল রাত রাত ১০টা ৩০ মিনিটে হত্যা করা হয়। ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন। শেরপুরে নিজের গড়া এতিমখানার পাশে চিরনিন্দ্রায় শায়িত হলেন শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। দাফনের পর থেকেই কবর জিয়ারতের জন্য নামে মানুষের ঢল। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে গতকাল রোববার ভোরে শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জমানকে দাফনের পর বেলা বাড়ার সাথে সাথেই হাজার হাজার মানুষ তার কবর জিয়ারত করতে আসছেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন কামারুজ্জামানের রূহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করছেন। এ সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সরকার জামায়াত নেতৃত্বকে সাজা দেয়ার আয়োজন সম্পন্ন করে। ১৯৭৩ সালের আইনে সংশোধন এনে দলীয় তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে মিথ্যা অভিযোগ ও সাজানো সাক্ষী দিয়ে কথিত মানবতাবিরোধী বিচারের রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই বিচারের জন্য প্রণীত আইন ও বিধিমালা নিয়ে শুরু থেকেই দেশে-বিদেশে বিশেষজ্ঞগণ গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিফেন জে র্যাপ, আইনজীবীদের বিশ্বের সর্ববৃহৎ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইট্স ওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ও সংস্থা এ নিয়ে আইন সংশোধনের জন্য নানা সুপারিশও দিয়েছে। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাতই করেনি। সরকার তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার জন্য জাতীয় নেতৃবৃন্দকে একের পর এক হত্যা করেই চলছে। ইতোমধ্যে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল স্বীকার করেছেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই বিচার হচ্ছে।