২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট রবিবার সকালে বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রহ.। তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে কাশিমপুর কারাগার থেকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে সেখান থেকে পিজি হাসপাতালে পাঠানো হয়। কারা কর্তৃপক্ষের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে গাজীপুর থেকে ঢাকায় আসতে সারাদিন ব্যয় হয়ে যায়। ১৩ তারিখ রাত ১০ টার পর তাঁকে পিজি হাসপাতালে আনা হয়।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দীর্ঘ দিন ধরে উচ্চ-রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসে ভুগছেন। প্রায় ৮৪ বছর বয়সী আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর হার্টে পাঁচটি রিং পরানো হয়েছে। এতো সিরিয়াস একজন রোগীকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালের পর থেকে শাহদাত পর্যন্ত তাঁকে বাইরের হাসপাতালে ডাক্তার দেখানো হয়নি।
১৩ আগস্ট রাতে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর থেকে পরিবারকে তাঁর অবস্থা সম্পর্কে কোনো কিছু জানতে দেওয়া হয়নি। ১৪ আগস্ট রাত ৯ টায় পরিবারকে জানানো হয় তিনি ৮ টা ৪০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রা.-এর চিকিৎসা নিয়ে পরিবার ও তাঁর ডাক্তারদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। ১৪ আগস্ট ২০২৩ তারিখে তাঁর শাহদাতের পর ঢাকায় জানাজা করতে দেয়নি ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার। তারা রাতের আঁধারে আল্লামা সাঈদীর লাশ পিরোজপুরে নিয়ে গিয়ে দাফন করে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু সাঈদী সমর্থকদের প্রতিরোধের মুখে পুলিশ তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
আল্লামা সাঈদীর শাহদাতের খুবর শুনে মুহূর্তেই হাজার হাজার মানুষ পিজি হাসপাতাল ও শাহবাগ এলাকায় জমায়েত হয়। তারা সারারাত আল্লামা সাঈদী মৃতদেহ পাহারা দেয়। ১৫ আগস্ট সকালে ফজর নামাজ শেষে পুলিশ পিজি হাসপাতালে তান্ডব চালায়।
কোনো যুদ্ধকবলিত এলাকায়ও যা হয় না পিজি হাসপাতালে পুলিশ সেই কাজটাই করেছে। তারা হাসপাতালে টিয়ার শেল, গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। হাজার হাজার রোগী শ্বাসকষ্টে পতিত হয়। মুহুর্মুহু গুলি করে তারা আল্লামা সাঈদীর লাশ ছিনিয়ে পিরোজপুর নিয়ে যায়।
পিরোজপুরে আল্লামা সাঈদীর জন্মভূমিতে লাখ লাখ জনতা উপস্থিত ছিল। পুলিশ সেখানে গিয়েই দ্রুত কোনোমতে দাফন করে দিতে চায়। কিন্তু জনগণ আল্লামা সাঈদীর ছেলেদের জন্য অপেক্ষা করতে বাধ্য করে পুলিশকে। অবশেষে পিরোজপুরে দুপুর ১ টায় ১ম জানাজা ও দুপুর ২ টায় ২য় জানাজা শেষে তাঁকে আল্লামা সাঈদীর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।