১ জানুয়ারি ১৯৪৮ – ২২ নভেম্বর ২০১৫
এই ভূখণ্ডে বিভিন্ন আন্দোলন, সংগ্রাম, জাতির উত্থান-পতন, প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রামে জনাব মুজাহিদ একটি অকুতোভয় নাম। তিনি আধিপত্যবাদ বিরোধী চেতনার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। বাংলার জমিনে নাস্তিকতাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের রক্তচক্ষু মোকাবিলা করে তৃণমুল থেকে গড়ে উঠে আসা একজন সংগ্রামী প্রাণপুরুষ। হাসিনা সরকার শুধুমাত্র আদর্শিক কারণেই ইসলামী আন্দোলনের এই জনপ্রিয় নেতাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবার পাঁয়তারা করছে। কিন্তু শহীদদের দুনিয়া থেকে সরানো যায় না। তাঁরা জীবিত। তাদের মরণ নাই। মানুষকে যুগ যুগ ধরে প্রেরণা দেবার জন্যই জন্ম।
২০১৩ সালের ১৭ জুলাই কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করেছেন আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ। ২০১৫ সালে ১৬ই জুন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। পরে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। ওই দিন রাতে আপিল বিভাগের এই দুটি পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পৌঁছায়। কিন্তু আপীল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হলে ১৮ নভেম্বর সেই আবেদন খা্রিজ করে দেন। ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর তাঁকে খুন করা হয়। তিনি শাহদাতবরণ করেন।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সরকার জামায়াত নেতৃত্বকে সাজা দেয়ার আয়োজন সম্পন্ন করে। ১৯৭৩ সালের আইনে সংশোধন এনে দলীয় তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে মিথ্যা অভিযোগ ও সাজানো সাক্ষী দিয়ে কথিত মানবতাবিরোধী বিচারের রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই বিচারের জন্য প্রণীত আইন ও বিধিমালা নিয়ে শুরু থেকেই দেশে-বিদেশে বিশেষজ্ঞগণ গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিফেন জে র্যাপ, আইনজীবীদের বিশ্বের সর্ববৃহৎ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইট্স ওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ও সংস্থা এ নিয়ে আইন সংশোধনের জন্য নানা সুপারিশও দিয়েছে। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাতই করেনি। সরকার তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার জন্য জাতীয় নেতৃবৃন্দকে একের পর এক হত্যা করেই চলছে। ইতোমধ্যে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল স্বীকার করেছেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই বিচার হচ্ছে।