বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের নেতা, দেশের গণমানুষের নেতা, দেশের গনতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রসেনানী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে গণমানুষের কল্যাণে নিবেদিত এই ব্যক্তিত্ব মুক্তিকামী ও মজলুম মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মাওলানা নিজামীর বলিষ্ঠ ভূমিকা বাংলাদেশের মর্যাদাকে বহির্বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল ও উন্নত করেছে।
মাওলানা নিজামী দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে পর্যায়ক্রমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দু’টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সফলভাবে পালন করে দেশের ইতিহাসে সৃষ্টি করেছেন যা এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। মাওলানা নিজামী কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এ দায়িত্ব পালনকালে তিনি যে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন এবং মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমকে গতিশীল ও সার্থক করে তুলতে যে যোগ্যতা ও সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন তা এক অনন্য ও অনুসরণীয় অধ্যায়। মন্ত্রণালয় পরিচালনায় তার বিরুদ্ধে সামান্যতম দুর্নীতির অভিযোগও উঠেনি।
মাওলানা নিজামী ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে পাবনার সাঁথিয়া-বেড়া এলাকার গণমানুষের প্রতিনিধি তথা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী হিসেবে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ৩৭ হাজার ৮শ ৬৯ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদে যোগদান করেন।
জন্ম, শৈশব ও শিক্ষা : মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৪৩ সালের ৩১ মার্চ পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম লুৎফর রহমান খান একজন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও খোদাভীরু লোক ছিলেন। ফলে বাল্যকাল থেকেই মাওলানা নিজামী ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শের আলোকে গড়ে ওঠার সুযোগ লাভ করেন। নিজগ্রাম মনমতপুর প্রাইমারি স্কুলে তাঁর লেখাপড়ার সূচনা হয়। এরপর তিনি সাঁথিয়ার বোয়াইলমারী মাদরাসায় ভর্তি হন। অল্প বয়সেই মাওলানা নিজামীর মধ্যে সুপ্ত নেতৃত্বের গুণাবলী শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রখর মেধার অধিকারী নিজামী বরাবরই বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৫৫ সালে তিনি দাখিল পরীক্ষায় ১ম বিভাগ লাভ করেন। ১৯৫৯ সালে পাবনার শিবপুর ত্বহা সিনিয়র মাদরাসা থেকে ১ম বিভাগে সমগ্র বোর্ডে ষোলতম স্থান অধিকার করে আলিম পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে একই মাদরাসা থেকে তিনি ফাজিল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
শিবপুর ত্বহা সিনিয়র মাদরাসায় ফাজিল শ্রেণীতে অধ্যয়ন করার সময় মাওলানা নিজামী বেশকিছু উদ্যোগী ও মেধাবী ছাত্র নিয়ে একটি সংগঠন কায়েম করেন।
মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনের জন্য মতিউর রহমান নিজামী তৎকালীন অন্যতম শ্রেষ্ঠ দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্র ‘মাদরাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা’য় ভর্তি হন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে মেধাবী নিজামী মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। এ-মাদরাসায় অধ্যয়নকালেই তিনি ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের একক সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সংস্পর্শে আসেন। ছাত্রসংঘের আকর্ষণীয় কর্মসূচি তাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। তিনি একনিষ্ঠভাবে এ-সংগঠনের মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহর যোগ্য বান্দা হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য দ্বীনের কাজে সঁপে দেন।
লেখাপড়া ও সাংগঠনিক কার্যক্রম- উভয় দিকেই তিনি সাফল্য অর্জন করেন। ১৯৬৩ সালে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে কামিল পরীক্ষায় ফেকাহশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৬৭ সালে কৃতিত্বের সাথে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন।
ছাত্র আন্দোলন : ১৯৬১ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘের দাওয়াতে সাড়া দিয়ে তিনি ছাত্রআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে থাকেন। ঐ সময় মাদরাসা-ছাত্ররা তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য আন্দোলন করছিল। ১৯৬২-৬৩ সালে এ-আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করে। কামিল শেষবর্ষের ছাত্র মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী মাদরাসা-ছাত্র হিসেবে মাদরাসা-ছাত্রদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এ-আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৬২-৬৬ সাল পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় অফিস সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৬ সালে মাওলানা নিজামীর উপর পূর্বপাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতির দায়িত্ব অর্পিত হয়। এ-সময় দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল সংঘাতমুখর। পরপর তিন বছর তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি তৎকালীন অবিভক্ত পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি (নাজেমে আ’লা) নির্বাচিত হন। পর পর দু’বছর তিনি এ-দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থাকেন।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর নেতৃত্বে পরিচালিত শিক্ষা-আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৯৬৭-৬৮ সালে ছাত্রদের উদ্যোগে শিক্ষাসপ্তাহ পালিত হয়। এ-উপলক্ষ্যে ‘শিক্ষাসমস্যা-শিক্ষাসংকট’ ও ‘শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন’ সংক্রান্ত দু’টি পুস্তিকা বের হয়। নিজামীর নেতৃত্বাধীন গঠনমূলক এ-আন্দোলন সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শিক্ষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায়, ছাত্রসংঘ ছাত্র-জনতার কাছে ক্রমে আরো প্রিয় সংগঠনে পরিণত হতে থাকে।
আসাদের নামাযে জানাযায় ইমামতি : আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী আসাদ নিহত হয়। আদর্শিক দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও মাওলানা নিজামী আসাদের জানাযায় উপস্থিত হন। ছাত্রনেতৃবৃন্দ তাঁকে ইমামতি করার অনুরোধ জানালে, তিনি জানাযায় ইমামতি করেন। এ-থেকে বোঝা যায় রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও ব্যক্তিগতভাবে মাওলানা নিজামী ছাত্রনেতা হিসেবে সকলের নিকট সম্মানের পাত্র ছিলেন।
১৯৭০ সালে নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না হওয়ার কারণে যে আন্দোলন শুরু হয়, তখন তিনি ছাত্র। সেই আন্দোলনকে তিনি ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থন করেছিলেন। নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে বিনা শর্তে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবী জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক কারণে তিনি পাকিস্তানের সংহতির পক্ষে অবস্থান নেন। তবে তিনি যুদ্ধ বা অপরাধমূলক কাজে অংশ নেননি।
জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান : ছাত্রজীবন শেষে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। তিনি পর্যায়ক্রমে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য হিসেবে ১৯৭৯-১৯৮২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি সংগঠনের এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত হন এবং ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এ-দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থাকেন। ১৯৮৮ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একটানা ১২ বছর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০০ সালের ১৯ নবেম্বর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর নির্বাচিত হন। ২০০১-২০০৩, ২০০৪-২০০৬, ২০০৭-২০০৯ সেশনে আমীরের দায়িত্ব পালনের পর ২০১০-২০১২ সেশনের জন্য তিনি পুনরায় আমীর নির্বাচিত হন। আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায়ই ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার হন তিনি। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নায়েবে আমীর মকবুল আহমাদ। গণআন্দোলনে মাওলানা নিজামী : স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের প্রতিটি গণআন্দোলনে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮২-৯০ সাল পর্যন্ত তদানীন্তন স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে যে-প্রচ- গণআন্দোলন গড়ে ওঠে, এ-আন্দোলনে মাওলানা নিজামী বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেন। ফলে একাধিকবার তিনি স্বৈরশাসকের আক্রোশের শিকার হন। তাঁর সাহসী নেতৃত্বের কারণে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে প্রচ- গণপ্রতিরোধ গড়ে ওঠে এবং ১৯৯০ সালে জাতি অপশাসনের হাত থেকে মুক্তি লাভ করে। ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামী প্রদত্ত ফর্মুলা অনুযায়ী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের এই ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকারের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে সংসদে মাওলানা নিজামী বিল উত্থাপন করেন। পরবর্তীতে সংসদের ভিতরে ও বাইরে জামায়াতে ইসলামীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে কেয়ারটেকার সরকারের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী দু:শাসনের বিরুদ্ধে মাওলানা নিজামীর সংগ্রামী ভূমিকা জাতির মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় দেশের ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তিসমূহ আওয়ামী দু:শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়। আওয়ামী লীগ কর্তৃক ইসলাম ও মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদা ধ্বংস, পৌত্তলিকতার প্রচলন, মাদরাসা শিক্ষা বন্ধের চক্রান্ত, কুখ্যাত জননিরাপত্তা আইনের ছদ্মাবরণে বিরোধী দল দমন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও দেশের অখ-তা বিরোধী পার্বত্য কালোচুক্তি, গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তির নামে প্রহসন, সর্বোপরি দেশ-জাতিকে ধ্বংসের বহুমুখী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে মাওলানা নিজামীর ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়।
১/১১’র জরুরী সরকারের সময়েও তিনি এর বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা পালন করেন। তিনিই প্রথম এ ধরনের সরকারের বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রথম কথা বলেন। টিপাইমুখ বাধ নিয়ে দেশব্যাপী গড়ে উঠা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন মাওলানা নিজামী।
চারদলীয় ঐক্যজোটের শীর্ষ নেতা মাওলানা নিজামী : ১৯৯৬ সালে জাতির ঘাড়ে চেপে বসা আওয়ামী দু:শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ চারদলীয় ঐক্যজোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। চারদলীয় ঐক্যজোট ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ আসনে বিজয় লাভ করে এবং সরকার গঠন করে। নানান চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রকে পরাজিত করে চারদলীয় ঐক্য অটুট রাখা ও শক্তিশালী করার পেছনে মাওলানা নিজামীর অপরিসীম ধৈর্য্য ও ত্যাগের কথা সকলেরই জানা। চারদলীয় ঐক্যজোটের শীর্ষ নেতা হিসেবে মাওলানা নিজামীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতি জনগণের রয়েছে বিপুল আস্থা।
জাতীয় সংসদে : মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৯১ সালে পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) নির্বাচনী এলাকা থেকে ৫ম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় সংসদে গঠনমূলক ও ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য তিনি বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। বিভিন্ন ইস্যুতে জাতীয় সংসদে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর যুক্তি ও তথ্যভিত্তিক বক্তব্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়ে তিনি একজন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে দেশবাসীর নিকট খ্যাতি লাভ করেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তিনি পার্লামেন্টে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন। তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক, তথ্য-যুক্তি ও সময়োপযোগী বক্তব্য পার্লামেন্টে সকলের সমর্থন লাভ করে। এ-সময় তিনি জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলনেতার দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে তিনি সংসদের ৪টি পার্লামেন্টারি কমিটির সদস্য ছিলেন। এগুলো হলো- কার্য-উপদেষ্টা কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, পিটিশন কমিটি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত কমিটি।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে সাঁথিয়া-বেড়ার জনগণ মাওলানা নিজামীকে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত করায় জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলের নেতা এবং সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী হিসেবে জাতীয় সংসদে পূর্বের চেয়েও কার্যকর ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।
জাতীয় ইস্যুতে মাওলানা নিজামী : ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর উপমহাদেশের অত্যন্ত প্রাচীন “বাবরী মসজিদ” ভেংগে দেয়া হয়। ভারতে বাবরী মসজিদ ভাংগার প্রতিবাদে সারা দুনিয়াব্যাপী মুসলমানরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। মসজিদ ভাংগার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ১২ কোটি তৌহিদী জনতার পক্ষ থেকে এদেশের বৃহত্তম ইসলামী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ৫ম জাতীয় সংসদে বাবরী মসজিদের উপর আলোচনার জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রথমে সরকারি দল ও বিরোধী দল আলোচনার প্রস্তাবে রাজী হয়নি। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলের চাপে অবেশেষে সংসদে বাবরী মসজিদ প্রসংগ আলোচনার জন্য উত্থাপিত হয়।
ফারাক্কা বাংলাদেশের ১৩ কোটি মানুষের জন্য জীবন-মরণ সমস্যা। ফারাক্কা ইস্যু নিয়ে জামায়াতে ইসলামী গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন করে আসছে। জাতীয় সংসদে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামীর ২০ জন এমপি একযোগে দাঁড়িয়ে ‘ফারাক্কা সমস্যা’ নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনার জন্য স্পীকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ¯পীকার জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলের চাপের প্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদে ফারাক্কা ইস্যু নিয়ে আলোচনার ব্যবস্থা করেন।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী জাতীয় সংসদে বসনিয়া-হারজেগোভিনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য নোটিশ দেন। পার্লামেন্টের ইতিহাসে আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর এই প্রথম সার্ববাহিনীর বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়।
মাওলানা নিজামীকে হত্যার ষড়যন্ত্র : মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী শুধু একজন ব্যক্তি নন, একটি প্রতিষ্ঠানও বটে। এ দেশের ইসলামী আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার কারণে ইসলাম বিরোধী অপশক্তি তাঁর বিরুদ্ধে বহুমুখী ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস ও সংঘাত-সংঘর্ষ বন্ধ করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য তৎকালীন ভাইস চ্যান্সেলর কর্তৃক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের বৈঠক ডাকা হয়। আমন্ত্রিত হয়ে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এই বৈঠকে উপস্থিত হন। এ-সময় পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাঁর উপর নগ্নহামলা চালানো হয়। এ-ঘটনায় তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন এবং দীর্ঘ সময় চিকিৎসাধীন থেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
১৯৯৬ পরবর্তী আওয়ামী লীগের শাসনামলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মাওলানা নিজামীর উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
কৃষি মন্ত্রণালয় : বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। ৮৫ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে জড়িত। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর কৃষিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি অবহেলিত কৃষিখাতকে আধুনিকায়ন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তৃণমূল কৃষকদের জন্য কাজ শুরু করেন। কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি, বীজ, সার ও অন্যান্য কৃষিজ সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিতকরণে তিনি দিনরাত কাজ করেছেন। তিনি নিয়মিত কৃষিবিদ, বিশেষজ্ঞ ও কৃষকদের নিয়ে ওয়ার্কশপের আয়োজন করেন এ খাতের সমস্যা চিহ্নিত করতে ও তা সমাধান করার জন্য। কৃষক, কৃষিবিদ ও তৃণমূল মানুষকে উদ্দীপনা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া, তাদের সমস্যা শুনা ও সমাধান দেয়ার জন্য তিনি দেশের এক প্রাপ্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে গেছেন। কৃষকদের আথির্কভাবে স্বাবলম্বী করা ও সবজিসহ কৃষিপণ্য সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য তিনি “চাষীর বাড়ি বাগান বাড়ি” নামক নতুন প্রকল্প চালু করেন। এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষকদের আথির্ক জীবনে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
মাওলানা নিজামী দেশীয় ফলজ ও ঔষধি বৃক্ষ ফলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধায়নের কারণেই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ফল মেলার আয়োজন করা হতো, যার মাধ্যমে মানুষকে ফলজ বৃক্ষ বপণ ও বিপণনে উৎসাহিত করা হতো। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় বীজও সরবরাহ করা হতো। মাওলানা নিজামী ব্যক্তিগতভাবে এ ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখতেন, এ প্রকল্পের সাফল্যের জন্য তিনি দেশব্যাপী ঘুরে বেড়িয়েছেন।
ভাত এ দেশের মানুষর প্রধান খাদ্য। কিন্তু ইদুর ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে থাকে। বিশেষ করে বীজতলা বেশ ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। মাওলানা নিজামী কৃষকদের এ সমস্যা সমাধানে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
মাওলানা নিজামী কৃষিনির্ভর শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি কৃষিনির্ভর শিল্প গড়ে তোলা ও উন্নয়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়ার ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন। তার সময়েই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী কৃষি মেলা করা হতো, যার মাধ্যমে কৃষকরা অনুপ্রেরণা পেতো, ব্যবসায়ীরা কৃষিনির্ভর শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত হতো।
মাওলানা নিজামী তার সময়কালে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের বীজ উইংকে শক্তিশালী করেন। তিনি মাটির গুণগতমান পরীক্ষার জন্য দেশব্যাপী সার্ভে করেন, এ ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত মনিটরিং এর ব্যবস্থা করেন।
মাওলানা নিজামীর দিক নিদের্শনায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাড়িয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলায়ও সম্প্রসারিত হয়েছিল।
তিনি এ দেশের কৃষিকে আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। ইতালীর রোমে অনুষ্ঠিত বিশ্ব খাদ্য সম্মেলন ও থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড রাইস রির্সাস ওরগানাইজেশনের সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। মাওলানা নিজামী কৃষি মন্ত্রণালয়ে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছেন। তার সততা, দক্ষতা ও একাগ্রতা পুরো সেক্টরকেই প্রভাবিত করে।
শিল্প মন্ত্রণালয় : কৃষি মন্ত্রণালয়ের পুণর্গঠন এবং এই মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক সফলতার ধারাবাহিকতায় ভেঙ্গেপড়া শিল্পখাতকে পুনরুজ্জীবিত ও গতিশীল করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আসে মাওলানা নিজামীর ওপর। কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতোই মাওলানা নিজামী দেশের কল্যাণে শিল্প মন্ত্রণালয়কে গতিশীল ও যুগপোযোগী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
তিনি দেশের শিল্পখাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন শিল্পনীতি ২০০৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশব্যাপী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের দ্রুত বিকাশের জন্য পৃথক এসএমই নীতি-কৌশল ২০০৫ গ্রহণ করা হয়েছে। তার সময়ই শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি শতকরা ১০.৪৫ ভাগে উন্নীত হয়। ২০০১-২০০২ অর্থ বছরে শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল শতকরা ৫.৪৮ ভাগ, যা ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে শতকরা ১০.৪৫ ভাগে উন্নীত হয়েছে।
তিনি অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সার উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহ নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সার উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য তার সময়ে মিশ্র সারের চাহিদা মেটাতে চট্টগ্রামে দৈনিক ৪শ মেট্রিক টন করে উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ডাই-এ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি-১) ও ডাই-এ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি-২) নামে দুটি নতুন সার কারখানা স্থাপন করা হয়।
তিনি উদ্যোগ নিয়ে কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) বন্ধকৃত কস্টিক ক্লোরিন প্লান্ট, খুলনা হার্ডবোর্ড মিলস, রংপুর সুগার মিলস পুনরায় চালু করেন।
ঢাকা মহানগরীর পরিবেশ উন্নয়নের জন্য হাজারীবাগে অবস্থিত ট্যানারি শিল্পকে সাভারে স্থানান্তরের জন্য গড়ে তোলা হয় চামড়া শিল্পনগরী।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের-বিএসএফআইসি দীর্ঘ ১৭ বছরের মধ্যে ২০০৫-২০০৬ আখ মাড়াই মওসুুমে দ্বিতীয় বারের মতো প্রায় ৭০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
বিসিক ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে ক্ষুদ্রশিল্পে ৯০ হাজার ২শ ৯৭ জন এবং কুটিরশিল্পে ৪২ হাজার জনসহ মোট ১ লাখ ৩২ হাজার ৩শ ৭৫ জন লোকের নতুন কর্মস্থান সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া ২০০৪-২০০৫ অর্থ বছরে বিসিক শিল্প ইউনিটগুলোতে ১১হাজার ৩৯কোটি টাকার পণ্য উৎপাদিত হয়েছে এবং এর মধ্যে রপ্তানি হয়েছে ৩হাজার ৬শ কোটি টাকার পণ্য।
দেশে মোট সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন লবণের চাহিদা থাকলেও বিগত ২০০৫-২০০৬ উৎপাদন মওসুুমে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে, যা ছিল রেকর্ড গড়ার মতো।
আটা ও ভোজ্যতেল ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে তার সময়ে বাংলাদেশ ফুড ফর্টিফিকেশন এ্যালায়েন্স গঠন করা হয়।
পণ্যের নকল ও ভেজাল প্রতিরোধ এবং বাংলাদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন শিল্প ও সেবাসামগ্রী বিশ্বের বিভিন্ন মানপ্রণয়ন ও স্বীকৃতি প্রদানকারী সংস্থাসমূহ কর্তৃক স্বীকৃতি অর্জনের লক্ষ্যে ন্যাশনাল এ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
তথাকথিত ইসলামী জঙ্গীদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ অবস্থান : চারদলীয় ঐক্যজোট যখন দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড শক্তিশালী করার কাজে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছিল, সন্ত্রাস দমনে একের পর এক সাফল্য অর্জন করে চলছিল, ঠিক তখন ইসলাম ও দেশ-বিরোধী শক্তির ক্রীড়নক একটি গোষ্ঠী দেশব্যাপী ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে বোমা হামলা চলায়। অথচ ইসলাম কখনোই কোনোরূপ সহিংসতার পথকে সমর্থন করে না। কিন্তু এই গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে ইসলামের বদনাম রটানোর জন্য এবং দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে থামিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে এ-হামলা পরিচালনা করে। জামায়াতে ইসলামী ও এর আমীর মাওলানা নিজামীর সোচ্চার ভূমিকার কারণে ইসলামের নামে বোমা হামলাকারী এ-সব ঘাতকদের মুখোশ জাতির সামনে খুলে যায়। চারদলীয় জোট সরকারের সময়েই জঙ্গির শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার হয়। তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হয়।
শিক্ষার ইসলামীকরণ ও মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে মাওলানা নিজামী : দেশব্যাপী প্রচলিত শিক্ষাব্যাবস্থার সংস্কার, উন্নয়ন ও মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে মাওলানা নিজামী পালন করেন আন্তরিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা। কওমী মাদরাসার স্বীকৃতি ও মান প্রদান এবং ফাজিল কামিলের মান প্রদানের মতো চারদলীয় জোট সরকারের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের পেছনে মাওলানা নিজামীর তাৎপর্যপূর্ণ ভূূূমিকার কথা সকলেরই জানা। এ সংক্রান্ত মন্ত্রী সভা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি।
বিভিন্ন জাতীয় কমিটিতে সম্পৃক্ততা : বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় মন্ত্রী থাকাকালীন তিনি জাতীয় বিভিন্ন কমিটির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে, চেয়ারম্যান, ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি কাউন্সিল; চেয়ারম্যান, কাউন্সিল অফ দ্যা বাংলাদেশ ষ্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই); কনবেনার, কার্যনির্বাহী কমিটি, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ডেভেলাপম্যান্ট; কনবেনার, বাংলাদেশ ফুড ফরটিফিকেশন এলায়েন্স; ভাইস চেয়ারম্যান, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলাপম্যান্ট; সদস্য, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ; সদস্য, নির্বাহী কমিটি, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ; সদস্য, ন্যাশনাল ট্রেনিং কাউন্সিল; সদস্য, ন্যাশনাল ওমেন ডেভেলপম্যান্ট কাউন্সিল; সদস্য, অর্থ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি; সদস্য, ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি; সদস্য, নারী অধিকার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি, সদস্য, মাদরাসা শিক্ষা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি; সদস্য, বাংলাদেশ সুগার রিসার্চ ইনস্টিটিউট।
বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান : ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনী মুসলমানদের সাথে ন্যক্কারজনক আচরণ, লেবাননে বর্বরোচিত ইসরাইলী হামলাসহ ইহুদীবাদীদের সব ধরনের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে মাওলানা নিজামী সংসদে, রাজপথে ও মিডিয়া জগতে নিয়মিত বক্তৃতা, বিবৃতি ও সাক্ষাৎকার প্রদান করেন।
মাওলানা নিজামী ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করা এবং তাদের উপর হত্যাযজ্ঞ, গ্রেফতার, অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য জাতিসংঘ, ওআইসিসহ সকল আর্ন্তজাতিক সংস্থা এবং শান্তিকামী বিশ্ববাসীর প্রতি আহবান জানান।
জার্মান অধ্যাপক হেন্স কিপেনবার্গ ‘মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা.কে এক যুদ্ধবাজ ও ইসলামকে জঙ্গি বা রণমুখী ধর্ম’ অভিহিত করার প্রতিবাদে মাওলানা নিজামী বলেন, ‘ইসলাম সন্ত্রাসবাদী ধর্ম নয় এরূপ কোনো সার্টিফিকেট পশ্চিমা বুদ্ধিজীবিদের কাছ থেকে নেয়ার প্রয়োজন আমাদের নেই। কেননা বিশ্বে এর-ই মধ্যে পশ্চিমা সভ্যতার অসারতা প্রমাণিত হয়েছে।
থাইল্যান্ডে ৮৪ জন মুসলমানকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে মাওলানা নিজামী বলেন, ‘এ-ঘটনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও জাতিসংঘ সনদ লংঘন করা হয়েছে। তিনি থাইল্যান্ডের মুসলমানদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ, অত্যাচার-নির্যাতন, জুলুম ও হত্যাকা- বন্ধ করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান।’
ডেনমার্কে মহানবী সা.-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের প্রতিবাদে জাতীয় সংসদে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৬-এর ঐতিহাসিক বক্তব্যে মাওলানা নিজামী বলেন, রসূলেপাক সা.-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের বিরুদ্ধে আমরা সকলেই এক হয়েছি। এই মহান সংসদে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করতে পেরেছি। এটা একটা ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত।
বিশ্ব রাজনীতিতে মাওলানা নিজামী : জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমীর এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে বিশ্বরাজনীতির সাথে মাওলানা নিজামীর রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। নানান গুরুত্বপূর্ণ আর্ন্তজাতিক রাজনৈতিক ইস্যুতে মাওলানা নিজামীর ভূমিকা প্রসংশিত হয়েছে।
২০০২ সালের ২৭ মার্চ মুসলিম দুনিয়ার বিখ্যাত চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ডক্টর ইউসুফ আল কারযাভীর নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্যের দশজন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা নিজামীর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
২০০২ এর ১১ এপ্রিল মাওলানা নিজামী রাবেতা আল আলম আল ইসলামীর সম্মেলনে যোগদান করেন এবং সৌদি গেজেট পত্রিকায় সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। এ সময় মাওলানা নিজামীসহ মুসলিম বিশ্বের ৫২ জন বিশিষ্টি চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবি আরব ও মুসলিম বিশ্বের জনগণের প্রতি ইসরাইলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত আহবান জানান।
২০০৩ সালের ১৫-১৭ অক্টোবর চীনে অনুষ্ঠিত Sustained Elimination of Iodine Deficiency Disorder শীর্ষক সম্মেলনের তৃতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী।
২০০৬ সালে মাওলানা নিজামী ইংল্যান্ডের শীর্ষ বৈদেশিক ও কূটনৈতিক নীতিনির্ধারণী বিশেষজ্ঞ ফোরাম চেথম হাউজের আমন্ত্রণে ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলামী রাজনৈতিক দলসমূহ : জামায়াতের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে তিনি এ-সংক্রান্ত একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ বৈঠকে বৃটেনের বিশিষ্ট নীতিনির্ধারক বুদ্ধিজীবি, কূটনৈতিকবৃন্দ, পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মাওলানা নিজামী উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
উল্লেখ্য যে, চেথম হাউজ বৃটেনের অন্যতম শীর্ষ নীতিনির্ধারণী বিশেষজ্ঞ ফোরাম, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রেখে থাকেন। মাওলানা নিজামী প্রথম বাংলাদেশী নেতা, যিনি চেথম হাউজের আমন্ত্রণে সেখানে বক্তব্য রাখেন।
২০০৬ সালে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত রাবেতা আল আলম আল ইসলামী কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক ওলামা সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে যোগদান করেন। তিনি মুসলিম ওয়াল্ড লীগ (রাবেতা), সেন্ট্রাল কো-অর্ডিনেশন কমিটির স্থায়ী সদস্য। মুসলিম উম্মায় তার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের ২০০৯ সালের ইউএসএ ভিত্তিক “দ্যা রয়েল ইসলামিক স্ট্যাটিজিক স্টাডিজ সেন্টার কর্তৃক বিশ্বের শীর্ষ ৫০ জন ব্যক্তিত্বের মধ্যে মাওলানা নিজামীকে নির্বাচন করেন।
বিদেশ সফর : মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সংস্থা, ইসলামী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে বিদেশ সফর করেন। এসব সফরে তিনি রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক ইসলামী নেতৃবৃন্দের সাথে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন। তিনি গ্রেট বৃটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স, গ্রিস, জার্মানী, চীন, ইতালী, কানাডা, সৌদি আরব, আরব আমীরাত, কাতার, ওমান, বাহরাইন, কুয়েত, সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, জাপান, পাকিস্তান, ইরান, তুরস্কসহ প্রায় অর্ধশত দেশ সফর করেন। তিনি বহুবার সৌদি আরব সফর করেন। এর মধ্যে ১৯৮০, ১৯৯৪, ১৯৯৮, ২০০০, ২০০১ এবং ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রতিবারই রয়েল গেস্ট হিসেবে মর্যাদা পান।
নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন : সাঁথিয়া-বেড়াবাসী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মতো ব্যক্তিত্বকে তাদের এযাবতকালের শ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবে গ্রহণ করেছে। সাঁথিয়া-বেড়াবাসীর নেতা হিসেবে সাধারণ জনগণের জন্য এতো বিপুল উন্নয়ন কর্মকা- মাওলানা নিজামী ছাড়া আর কারো পক্ষেই করা সম্ভব হয়নি। উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে পড়া সাঁথিয়া-বেড়া তথা পাবনাবাসীর প্রাণের নেতা হিসেবে মাওলানা নিজামী স্থান করে নিয়েছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ অঞ্চলের ১০টি মাদরাসার এমপিও বাতিল করা হয়েছিল, চারদলীয় জোটের ৫ বছরে তা পুনর্বহাল করা হয়েছে। ওই সরকারের আমলে মাত্র ত্রিশ থেকে চল্লিশ কিলোমিটার সড়ক পাকা ছিল। মাওলানা নিজামী ১৮৫ কিলোমিটার সড়ক পাকা করেছেন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে প্রতিটি রাস্তাই সংস্কার ও উন্নত করা হয়েছে।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী প্রথমবারের মতো ১৯৯১ সালে ৫ম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। এ-সময় তিনি সাঁথিয়া-বেড়ার উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেন তিনি। ২০০১ সালে তিনি ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয় বারের মতো এ-এলাকার প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। এ-সময়ে মাওলানা নিজামী সাঁথিয়া-বেড়ার উন্নয়নে যে-দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন অতীতের কারো সাথেই তার কোনো তুলনা চলে না। মাওলানা নিজামীর আমলে সাঁথিয়া-বেড়ার যে উন্নয়ন হয়েছে তার খবর এলাকাবাসী সবাই জানেন।
পারিবারিক জীবন : ১৯৭৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর শামসুন্নাহারের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। শামসুন্নাহার নিজামী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগ থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনিও ছাত্র জীবন থেকে ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ৪ ছেলে ও ২ কন্যা সন্তানের জনক।
লেখক নিজামী : মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সংগঠনের দায়িত্ব পালন ও রাজনৈতিক ব্যস্ততার মাঝেও ইসলামী সাহিত্য ও গবেষণায় মৌলিক চিন্তার আলোকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
বাল্যকাল থেকেই লেখালেখির প্রতি মাওলানা নিজামীর ঝোঁক ছিল। তিনি মাদরাসায় অধ্যায়নকালে পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। পাবনা থেকে প্রকাশিত বার্ষিক ম্যাগাজিন ‘অভিযানে’ তাঁর গুরুত্বপূর্ণ লেখা ছাপা হতো। তিনি দৈনিক আজাদ, সংবাদের ‘খেলাঘর’, ইত্তেফাকের ‘কচি কাঁচার আসরে’ নিয়মিত লিখতেন। মিল্লাতের ‘কিশোর কাফেলা’য় তার লেখা ছাপা হতো। তাঁর সৃজনশীল ও গবেষণাধর্মী এবং তথ্যসমৃদ্ধ লেখা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ছাত্রজীবনেই তিনি একজন লেখক ও ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
ছাত্রজীবন শেষে রাজনৈতিক ও ইসলামী আন্দোলনের বিভিন্ন ব্যস্ততায় জড়িয়ে পড়েও তিনি বিভিন্ন বিষয়ের উপর গুরুত্বপূর্ণ পুস্তক রচনা করেন। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা আটত্রিশ।
মাওলানা নিজামীর প্রকাশিত বই এর মধ্যে রয়েছে, আত্মশুদ্ধির উপায়, দ্বীন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব, ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়, আল কুরআনের পরিচয়, ইসলামী সমাজ বিপ্লব, ইসলামী আন্দোলন : সমস্যা ও সমাধান, ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ, রমযান, কুরআন ও তাকওয়া, জিকির ও দোয়া, কুরআনের আলোকে মুমিনের জীবন, রাসূলুল্লাহর (সা:) এর মক্কার জীবন, ইসলাম ও আর্ন্তজাতিক সন্ত্রাসবাদ ইত্যাদি।
মাওলানা নিজামীর কারাজীবন : ২০০৬ সালে চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হয়। সফল শিল্পমন্ত্রী হিসেবে মাওলানা নিজামী তার দায়িত্বভার শেষ করেন। এরপর ক্ষমতা গ্রহণ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালের সেনা সমর্থিক জরুরী সরকার ক্ষমতা দখল করে। সে সময় সকল রাজনীতিবিদদেরই বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হয়। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি বের করার জন্য তন্ন তন্ন করে খুঁজেও মাওলানা নিজামীর ব্যাপারে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ দাঁড় করাতে পারেনি। কিন্তু দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় মাওলানা নিজামীকে একটি বানোয়াট অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। গ্যাটকো মামলায় তাকে ২০০৮ সালের ১৮ মে দিবাগত রাতে তার বাসভবন থেক গ্রেফতার করা হয়। জীবনে প্রথমবারের মতো তিনি কারাজীবন বরণ করলেন। রাজনীতিবিদদের মধ্যে তিনিই প্রথম আইনী লড়াই এর মাধ্যমে জেল থেকে বেড়িয়ে আসেন। তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই মুক্তি লাভ করেন।
পরে একই বছর ১০ নবেম্বর বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি মামলায় বিশেষ জজ আদালতে হাজির হতে গেলে জামিন না দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। হাইকোর্ট তাকে ১২ নবেম্বর জামিন দিলে তিনি ১৬ নবেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন।
২০০৮ সালের ২৯ ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। ২০১০ সালের ২৯ জুন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়। একই দিনে নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকেও গ্রেফতার করা হয়। ৯টি হয়রানিমূলক মামলায় জড়ানো হয় মাওলানা নিজামীকে। এ সব মামলায় তাকে ২৪ দিন রিমান্ডে নেয়া হয়।
কারাগারে থাকা অবস্থায়ই ২০১০ সালের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।