১৯ মার্চ ১৯২৬ – ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
শহীদ মাওলানা এ কে এম ইউসুফ ছিলেন একাধারে স্বনামধন্য মুহাদ্দিস, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ও মুহাক্কিক। তিনি একজন দক্ষ সংগঠকও ছিলেন। তিনি তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ইসলামী আন্দোলনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে গেছেন এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ছিলেন এদেশের ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি চাষী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরের মানুষের খেদমত করে গেছেন। তার এই সমাজসেবামূলক কর্মের মাধ্যমে অমুসলিমরাও উপকৃত হয়েছেন। তিনি বলেন, জুলুমবাজ সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থের জন্য কথিত বিচারের নামে প্রহসন করে তাকে কারারুদ্ধ করে তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।
ইসলামী আন্দোলনকে স্তব্দ করে দিতে মরিয়া পাশের দেশের মুশরিকরা ও তাদের পদলেহনকারী স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার। এরই অংশ হিসেবে ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়। কাল্পনিক সব অভিযোগ আনে দেশের সবচেয়ে উত্তম মানুষগুলোর প্রতি। এর মধ্যে পাঁচজন নেতাকে ফাঁসী দিয়ে হত্যা করে। শহীদ এ কে এম ইউসুফ ছিলে অত্যন্ত বৃদ্ধ ও অনেক রোগের রোগী। তাঁকে বিনা চিকিৎসায় কারাগারে আটকে রাখা হয়। তিনি স্ট্রোক করার পরও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। চিকিৎসা না দিয়ে তাঁকে খুন করে সন্ত্রাসীরা। মুমতাজ আল মুহাদ্দিসীন নিজের জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত ইসলামের উপর টিকে ছিলেন। কোনো আপোষ করেননি সরকারের সাথে। ২০১৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে তিনি শাহদাতের নজরানা পেশ করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁকে শাহদাতের মর্যাদা দান করুন।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সরকার জামায়াত নেতৃত্বকে সাজা দেয়ার আয়োজন সম্পন্ন করে। ১৯৭৩ সালের আইনে সংশোধন এনে দলীয় তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে মিথ্যা অভিযোগ ও সাজানো সাক্ষী দিয়ে কথিত মানবতাবিরোধী বিচারের রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই বিচারের জন্য প্রণীত আইন ও বিধিমালা নিয়ে শুরু থেকেই দেশে-বিদেশে বিশেষজ্ঞগণ গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিফেন জে র্যাপ, আইনজীবীদের বিশ্বের সর্ববৃহৎ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইট্স ওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ও সংস্থা এ নিয়ে আইন সংশোধনের জন্য নানা সুপারিশও দিয়েছে। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাতই করেনি। সরকার তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার জন্য জাতীয় নেতৃবৃন্দকে একের পর এক হত্যা করেই চলছে। ইতোমধ্যে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল স্বীকার করেছেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই বিচার হচ্ছে।