২০১৩ সালের ১৭ জুলাই। ২য় দফা রিমান্ড শেষ করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থান করছি। রমজান মাসের কারনে হয়ত কাশিমপুর পাঠাবেনা মনে করে পুরো রমজান মাসের প্রস্তুতি নিয়ে আছি। গ্রেফতার আগের চাইতে কম তারপর ও ২/১ দিন পর পর আমাদের লোক আসা অব্যহত। বিশেষ করে গত ১৫ জুলাই ২০১৩ সাবেক আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম স্যারের ট্রাইবুনাল থেকে ৯০ বছরের সাজা ঘোষনার পর আরেক দফা গ্রেফতার শুরু হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের সবার মন খারাপ। গতকাল জানলাম আজকে সেক্রটারী জেনারেল মুজাহিদ ভাইয়ের রায়। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা আরো বাড়তে শুরু করলো।
কারাগারে আমি এখনো নতুন। পুরাতনরা সব বিষয়ে ওয়াকিফাহাল। আমি ছাড়া ইয়াসিন আরাফাত (সাবেক সিপি) ভাই বড় দায়ীত্বশীল এবং সব কিছু দেখাশোনার দায়িত্বে। সেজন্য আমি নিজেই তাদের উপর নির্ভরশীল । অন্য দায়ীত্বশীলদের মধ্যে মরহুম জনাব আতাউর রহমান ভাই (রাজশাহী মহানগরী সাবেক আমীর ) ফাহিম(সাবেক কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক), মাহবুব (ঢাবি) আছেন। ডাঃ শফিক ভাই ,অধ্যাপক তাসনীম আলম ভাই, সেলিম উদ্দিন ভাই,আতিক ভাই (সাবেক সিপি) সাজ্জাদ, দেলোয়ার ,ইয়াহিয়া (সাবেক পরিষদ ) এরা কাশিমপুরে চলে গিয়েছে। তখন এত বেশি লোক কারাগারে । আমরা প্রায়ই বলতাম বাহিরের চাইতে কারাগারের ভিতরে লোক বেশি সুতারাং জামিন করে কি লাভ। মাঠে ময়দানে যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে। আমার মাত্র কয়েকদিন হলেও ৩মাস ৬ মাস ধরে আছেন এ সংখ্যা কম নয়। আমদানি, সাক্ষাৎ রুম ,মসজিদ যেখানে যাই একটু দাঁড়ালে আমাদের লোক জড় হয়ে যায়। আমাদনী মানে যুমনা ব্লিডিং এর পিছেনে অফিস থেকে আসার যে পথ সেখানে রাস্তার দক্ষিন দিকে ফাসীর সেল আর উত্তর দিকে খালি যায়গায় বাহির ক্যান্টিন থেকে পাঠানো খাবার বিতরনের যায়গা। এই খানে আমাদের সব সময় বড় জমায়েত হত অনেক কারনে। আমাদানি মানে নতুন লোকের আগমন, সাক্ষাৎ এর যাওয়া আসা,কোর্টে যাওয়া আসা , ক্যান্টিনের খাবার বিতরন এ সব কিছুকে কেন্দ্র করে আমাদের জমায়েত । এই কারনে কাউকে খোজার জন্য এখানে এসে দাঁড়ালেই কিছুক্ষনের মধ্যে পাওয়া যেত। কয়েকদিন আগে আমরা এ জায়গার নামকরন করি সাঈদী চত্বর। নামটি আমাদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। অন্য সাধারন কয়েদী হাজতীরা যাদের সাথে আমাদের বেশি যোগাযোগ তারাও একসময়ে এ জায়গা কে আমদানির আমতলা পরিবর্তে সাঈদী চত্ত্বর বলতে শুরু করে। এই সাঈদী চত্তর আমাদের মিলন কেন্দ্র।
আজকে সকাল থেকে সবার মুখে মুখে মুজাহিদ ভাইয়ের রায় নিয়ে । গতাকাল উনাকে নারায়নগঞ্জ থেকে এখানে নিয়ে আসছে। রাতেই দায়িত্বপ্রাপ্ত আমাদের ভাইয়েরা উনার খাবার প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছিয়েছেন । সকালে কোর্টে নিয়ে যাবে নেয়ার আগেই যাওয়ার পথে উনার সাথে দেখা করার পরিকল্পনা রাত থেকে। সারা রাত অনেকটা নির্ঘুম রায়ের আশংকায়। অধ্যাপক গোলাম আযম স্যারের রায় হল মাত্র ২দিন আগে এটা নিয়ে আমাদের কষ্ট ,ক্ষোভ ,নানা জিজ্ঞাসার মধ্যে আরেকটি দূঃসংবাদের অপেক্ষা। আল্লাহর কাছে সহ্য করার শক্তি কামনা করা ছাড়া বাকি সব দোয়াই ভুলে গিয়েছি। সকালে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি, এর মধ্যে বেশ কয়েকজন আমাদের ভাই এবং পরিচিত কয়েদিরা মুজাহিদ ভাই কে নিয়ে আসার খবর দিয়ে গিয়েছে। উনার সালাম পৌঁছিয়েছে । আমারা সালাম দিতে বললাম, কি কি লাগে তা জানাতে বললাম। কয়েকজন এসে জানাল উনাকে আনার কারনে কারাগারে একটু কড়াকড়ি । আমরা যেখানে গিয়ে উনার সাথে দেখা করব সেখানে কাউকে দাড়াতে দিচ্ছিনা। কিছুক্ষনের মধ্যে উনাকে নিয়ে যাবে একথা শোনার পর টেনশান বেড়ে গেল। আদৌ দেখা করতে পারবো কিনা? ২/১ জন বলল ,দেখা করিয়ে দিব। আবার ২/১ জন বলল মনে হয় পারা যাবেনা। আশা নিরাশার দোলাচালে। কিন্তু দেখা করার ব্যাপারে আমি স্থীর সীদ্ধান্তে। এখান থেকে বের হওয়ার উপায় ২টি একটি হচ্ছে সাক্ষাতের জন্য যাওয়া আর ২য় হচ্ছে পিসির খাবারের জন্য যাওয়া। কোনটার সু্যোগ নাই। সব শেষে কেইস টেবিলে যাওয়ার সুযোগে বের হয়ে আসলাম। সাঈদী চত্ত্বরের পাশে ঘুরাঘুরি করছি। আস্তে আস্তে আমাদের ভীড় বাড়তে থাকলো সে সাথে কারারক্ষী আর আমাদের ভাইদের টম এন্ড জেরী খেলা। আমি একজন পরিচিত কয়েদি নিয়ে দাড়িয়ে আছি। কিছুক্ষন পর আতাউর ভাই ,ফখরুল ভাই মেঝবাহ ভাই ও আসলেন।
আতাউর ভাই খুব সহজ সরল মানুষ , মিরপুর থানার রিমান্ড শেষে এখানে আছেন। অনেক বেশি নির্যাতন করা হয়েছে। একটি পা উঠিয়ে হাঁটতে পারতেন না । মাটির সাথে লাগিয়ে খুটিয়ে হাটতেন। এখনো নাকি সে পা ভাল হয়নি। হঠাত উনি কারারক্ষীর জেরার মুখে পড়ে গেলেন। কি জবাব দিবেন উপায় না পেয়ে বললেন পিসিতে যাব । পিসি কিন্তু উনার পাশে। তখন কারারক্ষী বলল, পিসি কি এখানে ? এখনতো পিসির সময় না বলে সরিয়ে দিলেন। উনিও একটু ঘুরে ফিরে আবার হাজির। সবাই নড়েচড়ে অপেক্ষা করছি।
কিছুক্ষন পর সুবেদার, সি আইডি ,কারারক্কী উনাকে নিয়ে ৬ সেল থেকে এগিয়ে আসছেন। আমরা ও সবাই একসাথে ভীড় না করে আমি আতাঊর ভাই ফখরুল ভাই যাওয়ার সীদ্ধান্ত নিলাম। সাদা পায়জামা , পাঞ্জাবী ,বাটা কোম্পানির রানিং শু পরে মুজাহিদ ভাই স্বাভাবিকের চাইতে দ্রুত গতিতে হাসিমুখে কারারক্ষীদের সাথে কথা বলতে বলতে হেটে আসছেন। মুজাহিদ ভাই একটু দ্রুতই হাটেন। অনেকটা খোশ গল্প করার মত। হাত তুলে পাশের লোকদের সালামের জবাব দিচ্ছেন। আজকে উনার রায়,অথবা উনি কারাগারে আছেন এরকম কোন চিন্তা পেরেশানীর কোন চিহ্ন উনার চেহারার মধ্যে নাই। মনে হচ্ছে উনি কোন জনসভায় বক্তৃতা দিতে যাচ্ছেন। একটু সুযোগ পেয়ে আমরা এগিয়ে গেলাম । শুরুতে আতাউর ভাইকে দেখে বললেন , “ কি আতাউর কেমন আছে? তুমি গ্রেফাতার হয়েছ শুনেছি ,এখানে আছো তা জানি না”। আতাউর ভাইয়ের সাথে কোলাকুলি করলেন , উনার কপালে চুমু খেলেন। এরপর আমার সাথে কলাকুলি করলেন, আমার কপালে চুমু দিলেন। জিজ্ঞেস করলেন, “ তোমার কত দিন হইছে?” বাকিদের সাথে হ্যান্ডশেক করলেন। আমাদের হ্যান্ডশেক কোলাকোলি কুশুল বিনিময় চলছে আবার পিছন দিক থেকে কারারক্ষীদের সরিয়ে দেয়ার তৎপরতা ও চলছে। প্রায় এক দেড় মিনিটের রাস্তা কথা বলতে বলতে এগিয়ে গেলাম। এই এক মিনিটের রাস্তা ২/৩ মিনিটের দেখা আমাদের হাজার বছরের প্রেরনা। উনি খুব জোর গলায় বললেন, চিন্তা করোনা , আল্লাহর কাছে দোয়া কর । ইনশাল্লাহ ওরা আমাদের কিছুই করতে পারবেনা”।
সেদিন মুজাহিদ ভাইয়ের এ কথা শুনার পর আমদের সব কষ্ট গুলো দূর হয়ে গেল। নিজেদের কষ্ট। উনার রায় নিয়ে টেণশান, সাবেক আমীরে জামায়াতের রায় সব কিছুই উধাও হয়ে গেল। কত আল্লাহ নিরভরতা,কত আত্মবিশ্বাস। মুমিনদের জন্য আল্লাহই একমাত্র ভরসা। আমরা সবাই উনার চলে যাওয়ার দিকে পলকহীন তাকিয়ে থাকলাম। সেখান থেকে ফিরে এসে রেডিও নিয়ে বসে থাকলাম। সরকার আর ট্রাইবুনালের বিগত দিনের কার্যক্রমে খুব বেশি আশাবাদী না হলেও আল্লাহর রহমতের দিকে তাকিয়ে আছি। যে যার মত নামাজ দোয়া নিয়ে ব্যাস্ত। অবশেষে দুঃসংবাদটি শুনলাম। এটা নিয়ে খুব বেশি বিচলিত হলাম না । উনাকে আনার পর ফাঁসির সেলে দিয়ে দিবে সেজন্য করনীয় ঠিক করে ভাইদেরকে পরামর্শ দিলাম ।আসার সময়ে দেখা করার সুযগের অপেক্ষায় থাকলাম।রায়ের পর কারাগারে কড়াকড়ি আরাও বেড়ে গেল। কোথায় কাঊকে জড় হতে দিচ্ছেনা। আমাদের ভাইয়েরা খুব একটা নাই। আমি সাঈদী চত্ত্বরের পাশে তিন সেড এ বসে অপেক্ষা করছি। ইয়াসিন আরাফাত ভাইকে দেখতে পেলাম । ২ টার কিছু আগে পরে মুজাহিদ ভাইকে নিয়ে আসলো। চারদিকে কারারক্ষিদের হুইশেল এবং হন্তদন্ত দৌড়াদোড়ি। একগ্রুপ দৌড়াতে দৌড়াতে ফাঁসির সেলের দিকে চলে গেল। এত কড়াকড়ির মধ্যেও উৎসুক লোকের ভীড়। অল্প সময়ের মধ্যে মুজাহিদ ভাইকে অফিস থেকে বের করলো। পুরো রাস্তা সহ আসেপাশে ফাঁকা । আমাদের যাওয়ার সুযোগ নাই। আগের মত স্বাভাবিক ভাবে মুজাহিদ ভাই হেটে আসছেন।সাদা পাঞ্জাবীর উপর কয়েদী জামা পরিয়ে দেয়া হয়েছে।পরে শুনেছিলাম উনি কয়দি জামা পড়তে চাননি। ডিভিশন প্রাপ্ত আসামীদের সাজার পরে কয়েদী জামা পরার বাধ্যবাদকতা নাই। কারা কতৃপক্ষ নিজেদের চাকরি বাচানোর অজুহাতে অনুরোধ করায় পরেছেন। দূর থেকে দাঁড়ানো লোকদের হাত নেড়ে সালামের জবাব দিচ্ছেন। আমাদের মধ্যে অনেক প্রতিক্রিয়া থাকলেও মুজাহিদ ভাইয়ের হাটার গতি এবং ছন্দে কোন পার্থক্য নাই। নিশ্চিন্ত ,নির্ভার হাটতে হাটতে কারারক্ষী,সুবেদার জমাদারের সাথে ফাঁসির সেলে চলে গেলেন। দূর থেকে হাত দিয়ে সালাম এবং ইশারা করলেও আমাদেরকে বুঝতে পারলেন কিনা জানিনা। আমাদের সেলে ফিরে এসে উনার ইফতার ,ফ্যান,বালতিসহ প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো পৌছানোর ব্যাবস্থা করলাম সবাই মিলে। আতাউর ভাই, ইয়াসিন ভাই, ফখরুল ভাই, মেঝবাহ ভাই ,ফাহিম সহ সবার তখন একই প্রশ্ন উনার প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো দেয়া হয়েছে কিনা?।
খুবই আত্মবিশ্বাসী একজন মানুষ। এরকম নির্ভার, নিশ্চিন্ত মানূষ খুব কমই হয়। নিজের গন্তব্য জানা এবং এর উপর অবিচলতাই মুজাহিদ ভাইকে আনেক বিশ্বাসী করেছে। আমার উপর সেক্রেটারি জেনারেলের দায়ীত্ব আসার পর থেকে উনাকে কাছে থেকে দেখার ,উনার একান্ত নসিহত শোনার সুযোগ হয়েছে। ছাত্রশিবিরকে একেবারে নিকট থেকে দেখে গাইড করতেন। আমাদের ভুলগুলো সরাসরি ধরিয়ে দিতেন। উনার সাথে থেকে বেশ কিছু ঘটানার আলোচনা পর্যালোচনা সমাধান করার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ হয়েছিল। অন্যকোন প্রেক্ষাপটে সুযোগ হলে সে বিষয়ে লিখবো। তবে আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় ইতিহাস, রাজনীতি ,অন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে জানা,আমাদে সংগঠন ,দায়িত্বশীল সম্পর্কে বিস্তারিত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আমি আর কাউকে দেখিনি। পরিস্থিতি মোকাবিলার অসাধারণ যোগ্যতা ছিল মুজাহিদ ভাইয়ের। আমার দৃষ্টিতে এ সফলতার অন্যতম কারন হচ্ছে মুজাহিদ ভাই ঘটনা সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে অনেক বেশি জানতেন যার কারনে তাদের দ্বারা সৃষ্ট ঘটনার গতিপ্রকৃতি ও ধারনা করতে পারতেন বলে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সমাধান করতে পারতেন। এ রকম দরদী অভিভাবক এবং সতর্ককারীর অভাব আমারা খুব অনুভব করি বিশেষ করে ইসলামী ছাত্রশিবির । আল্লাহ দ্রুত আমাদের সে অভাব পুরনের ব্যাবস্থা করে দিন আমীন।
আমরা জানিনা মুজাহিদ ভাইকে নিয়ে সরকার খুব আতংকে থাকতো। জীবিত মুজাহিদ ভাই, গ্রেফতারকৃত মুজাহীদ ভাই, ফাঁসীর সময়ের মুজাহিদ ভাই এবং শহীদ মুজাহিদ ভাই সব অবস্থায় আমারা দেখতাম সরকার এবং কারা কতৃপক্ষ নজির বিহিন কড়াকড়ি আরোপ করেছে। যা ইতিপূর্বে এবং পরে অন্য কারো সময়ে করেছে আমার জানা নাই। আপনাদের অনেকের জানা আছে উনাকে একরকম ঘুম থেকে তুলে নিয়ে ফাসি দেয়া হয়েছে। উনার পারিবারিক সাক্ষাৎকারের বর্ণনায় এসেছে,। উনার পরিবার যখন শেষ সাক্ষাতের সেলের সামানে তখন তিনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। উনাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে তখন তিনি বললেন,তোমরা মনে হয় শেষ সাক্ষাৎ করতে আসছ, আমাকে এখন পর্যন্ত কিছুই জানানো হয়নি। যাক আলাহামদুলিল্লাহ”।উনি নিজেই বলেছেন , “আজকে যদি আমার ফাঁসি কার্যকর হয় তাহলে সেটা হবে ঠাণ্ডা মাথায় একজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা”। সরকার তাই করেছে।
আমরা তখন কাশিমপুর কারাগারে। আমাদের অবস্থা ছিল আরও খারাপ। ২৩ তারিখ সকালে অন্যদিনের মত কোর্টে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আমি এবং দেলয়ার ভাই বাহিরে এসে অপেক্ষা করছি। কারাগারের পরিস্থিতি,কারারক্ষীদের কানাকানি কয়েকজন কারারক্ষীর বেদনাক্লিষ্ট চেহারায় সংবাদটি দেয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম আলী আহসান মুজাহিদ ভাই শাহাদাত বরন করেছেন। ১ মাস আগে থেকেই অনেক কড়াকড়ি শুরু হয়। আমি এবং দেলোয়ার ভাইয়ের প্রতি সপ্তহের সাক্ষাৎ বন্ধ করে ১৫ দিন পর পর করে। ভিতরে আমাদের চলাফেরা বন্ধ করে দেয়। ১ সপ্তহা আগে পুরো কারাগার থেকে আমাদের নিত্য সময়ের সাথী এবং খবর শনার এক্মাত্র মাধ্যম রেডিও উঠিয়ে নিয়ে যায়। ২ দিন আগে থেকে কারাগারে পত্রিকা বন্ধ করে দেয়। কারাজীবনের কষ্টকর সময়ের মধ্যে এটা ছিল অন্যতম। আমি আর দেলোয়ার ভাই পরিস্থিতি দেখে বুঝতে পারলাম মুজাহিদ ভাই আল্লয়াহর দরবারে হাজির হয়েছেন। উনার ফাঁসি নিয়ে এত নাটকীয়তা এবং ষড়যন্ত্র হয়েছে তাঁর কন কিছুই আমারা এ দু দিনে টের পেলাম না। পরিস্থিতি অনেকটা সহে গিয়েছে। সেদিন আর কোর্টে নেয়নি আমাদেরকেও বেশিক্ষন বাহিরে থাকতে দেয়নি। দোয়া, কুরআন খানি করারা কর্মসূচী নিয়ে বাকরুদ্ধ অবস্থায় ওয়ার্ডে ফিরে এলাম। সমস্ত বিচারের ভার আল্লাহর কাছে।
কবি আল মাহমুদের ভাষায়-
আমরাতো শাহাদাতের জন্যই
মায়ের উদর থেকে পৃথিবীতে পা রেখেছি
পৃথিবীতে যত গোলাপ ফুল ফোটে
তাঁর লাল বর্ণ আমাদের রক্ত
তাঁর সুগন্ধ আমাদের নিঃশ্বাস বায়ু।
জান্নাতের বাগানে পাখি হয়ে উড়ুক আমাদের সম্মানিত নেতা শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ভাই। আমীন
ডাঃ মোঃ ফখরুদ্দিন মানিক
সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির