আমাদের শহীদেরা
  • প্রচ্ছদ
  • আমাদের শহীদেরা
    • শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযম
    • শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী
    • শহীদ আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ
    • শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী
    • শহীদ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুস সুবহান
    • শহীদ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ
    • শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান
    • শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা
    • শহীদ মীর কাসেম আলী
    • শহীদ আবদুল খালেক মন্ডল
  • আপনিও লিখুন
  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
No Result
View All Result
আমাদের শহীদেরা
  • প্রচ্ছদ
  • আমাদের শহীদেরা
    • শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযম
    • শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী
    • শহীদ আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ
    • শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী
    • শহীদ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুস সুবহান
    • শহীদ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ
    • শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান
    • শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা
    • শহীদ মীর কাসেম আলী
    • শহীদ আবদুল খালেক মন্ডল
  • আপনিও লিখুন
  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
No Result
View All Result
আমাদের শহীদেরা
No Result
View All Result
প্রচ্ছদ শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী স্মৃতিচারণ : শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী

আব্বু এবং আমি (পর্ব-৩)

নাজিব মোমেন

in স্মৃতিচারণ : শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী
আব্বু এবং আমি (পর্ব-৩)

রাসূল সা: এর হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি, ইসলাম হল আন্তরিকার নাম। জিজ্ঞাস করা হল আন্তরিকতা কার জন‍্য? রাসূল সা: বললেন, আল্লাহর জন‍্য, তার কিতাবের জন‍্য, রাসূলের জন‍্য, নেতৃবৃন্দের জন‍্য ও সাধারন মুসলমানদের জন‍্য (সহীহ মুসলিম)। আব্বুর জীবনে আমরা এই হাদীসের বাস্তব প্রতিফলন দেখতে পাই। আমি ইতিপূর্বে স্মৃতিচারন করেছি যে, আব্বুর জীবনে নামাজের গুরুত্ব ছিল সবার উপরে। কিছু ব‍্যাতিক্রম ছাড়া কখনই তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ কাযা করেন নি। মনে পড়ে চট্রগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্রমামলা চলাকালে অনেক সময় ধরে আব্বুর সাথে পাশাপাশি বসে গল্প করার সুযোগ হত। কোন এক প্রসংগক্রমে আব্বু বলেছিলেন, তাহাজ্জুদ নামায সুন্নত হলেও ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন‍্য এটার গুরুত্ব ওয়াজিবের পর্যায়ের। আব্বুর ব‍্যাক্তিগত একজন সহকারী বলতেন, স‍্যার নামাজে দাড়ালে মনেই হয়না যে উনার কোন ব‍্যাস্ততা আছে। নামাযের পরে লম্বা দুআ করা, কারনে অকারনে আল্লাহর দরবার ধর্নাদিয়ে পড়ে থাকা ছিল আব্বুর অভ‍্যাস। আব্বুর ব‍্যাক্তিগত সহকারী সিদ্দিক চাচার মুখে শুনেছি, ৯০ এর দশকের শুরুর দিকে গোলাম আযম চাচার নাগরিকত্ব নিয়ে চলা সংকটের একপর্যায়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বুকে ফোনে জানায়, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে গোলাম আযম চাচাকে ইউরোপে পাঠিয়ে দিবে। আব্বু অভ‍্যাসবশত: কিছুক্ষন চুপ করে থাকলেন তার পরে বললেন, মতিন সাহেব মনে রাখবেন আপনাদের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভত পরিস্থিতির দায়দায়িত্বও আপনাদেরকেই নিতে হবে। আব্বু এর পরে সিদ্দিক চাচাকে বললেন নামাযের জায়নামাযটি বিছিয়ে দিতে আর আধাঘন্টার জন‍্য উনার অফিসের দরজাটা বন্ধ করে দিতে। তারপর আব্বু নামাজে দাড়িয়ে গেলেন। দীর্ঘক্ষন ধরে সেজদায় পড়ে থাকলেন। নামাজ শেষে তিনি অন‍্যান্ন দায়িত্বশীলদেরকে নিয়ে বসে পরবর্তী কর্মসূচী ঠিক করেন। আল্লাহর রহমতে জামায়াতের আদালতের ভিতরে ও বাইরে যুগপৎ কর্মসূচীর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আর গোলাম আযম চাচাকে দেশের বাইরে পাঠাতে সাহস করে নাই। আব্বুর সাংগঠনিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমি উনাকে এভাবেই আল্লাহর উপর ভরসা করে মাঠে ময়দানে ভূমিকা রাখতে দেখেছি।

আব্বু বলতেন, দাদা দোয়া করেছিলেন, আল্লাহ যেন আব্বুকে রাসূল সা: এর ছায়া বানায়। আল্লাহ হয়ত দাদার দোয়া কবুল করেছিলেন। সেই জন‍্যে আব্বুর সকল কাজ কর্মে রাসূল সা: এর অনুসরন করার একটা সচেতন প্রচেষ্টা ছিল। আব্বু যখন সাইটিকায় আক্রান্ত হয়ে পিঠের ব‍্যাথায় শয‍্যাশায়ী হলেন, তখন তিনি এটা ভেবে সান্তনা পেতেন যে রাসূল সা: ও সাইটিকায আক্রান্ত হয়েছিলেন। আব্বুর কাছ থেকে তখন জেনেছি সাইটিকা রোগের একটা আরবী নাম আছে ( عرق النسا )যার বর্ননা হাদীসে এসেছে। আব্বু জেলখানার ভিতরে বসেও রাসূল সা: এর উপরে একটি বই লিখেছেন, তিনি বলতেন কুরআনকে ভালভাবে বুঝতে হলে রাসূল সা: এর সীরাতকে ভালভাবে জানতে হবে, আর রাসূলের সীরাতকে ভালভাবে জানতে হলে কুরআনকে ভালভাবে বুঝতে হবে, কেননা হাদীসের ভাষায় ‘রাসূল সা: এর চরিত্রই ছিল কুরআন’। আব্বু কুরআনে বর্নিত দুআ গুলো নিয়মিত চর্চা করতেন। মাসনুন দুআ গুলো নিজেও পড়তেন আমাদেরকেও পড়তে উৎসাহীত করতেন। আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সা; এর প্রতি উনার মহব্বত ছিল এমনই।

একইভাবে আব্বু এতবড় দায়িত্বশীল হওয়া স্বত্বেও উনার সাংগঠনিক জীবনের দায়িত্বশীলদের প্রতি তার আন্তরিকতা ছিল অনুকরনীয়। আব্বুর মুখে শুনেছি, আব্বু যখন ছাত্র সংগঠনের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্বপালন শেষে জামায়াতের একজন সাধারন কর্মী হিসাবে কাজ শুরু করলেন, অনেকেই আড়ালে আবডালে বলতেন এতবড় নেতা কি আর আমাদের কথা শুনবে? কিন্তু আব্বু উনার আন্তরিকতা দিয়ে সকলের আস্থা অর্জন করেছিলেন। আব্বুর এক ছাত্রজীবনের সাথী তার স্মৃতিচারনে বলেছেন উনার কাছে নেতা নিজামীর পরিচয় থেকে কর্মী নিজামীর পরিচয় অনেক বড়। আব্বুর সংগঠনের সকল পর্যায়ের জনশক্তি সহ সাধারন মানুষের প্রতি আন্তরিকতাও ছিল দৃষ্টান্ত মুলক। আব্বু কার নাম কোনদিন ভূলতেন না। জীবনে একবার দেখা হলেও পরবর্তীতে তার নাম চেহারা ঠিকই মনে করতে পারতেন। আব্বুর কাছে যখন আমাদের এলাকা থেকে কেও দেখা করতে আসতেন আব্বু তাদের বাবা চাচাদের নাম ধরে তাদের খোঁজ খবর নিতেন। আমি মনে করি মানুষকে মনে রাখার এই অদ্ভুত ক্ষমতা আব্বুর মানুষের প্রতি আন্তরিকতার কারনেই সম্ভব হয়েছিল। আব্বুকে দেখেছি দেশের কোথাও যদি গন্ডগোল বা মারামারি হত, বিশেষ করে বিশ্ববিদ‍্যালয়গুলোতে যখন শিবিরের উপর হামলা হত, তিনি সারারাত ঘুমাতে পারতেন না। পায়চারী করতেন আর কিছুক্ষন পরপর ফোনে খবর নিতেন।

আব্বুর সাথে ৯০ এর দশকের শেষের দিকে উত্তরবঙ্গে রোডমার্চে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তখন দেখেছিলাম রাত্রে বেলা ক্লান্ত হয়ে আমরা সবাই ঘুমিয়ে গেলেও আব্বু ঠিকই সতর্ক থাকতেন। একরাতে বৃষ্টি শুরু হলে তিনি আমাদের সবাইকে ডেকে নিয়ে কর্মীদের খোঁজ খবর নিতে বের হন। শহীদ কামারুজ্জামান চাচার মুখে সেদিন শুনেছিলাম, ৮০ এর দশকে আজিমপুরে শিবিরের কর্মী সম্মেলন হয়েছিল, সে সময় মাঝ রাতে ঝড়ে প‍্যান্ডেল উড়ে যায়। ঝড় থামার পরে আব্বু রাতের বেলাই দায়িত্বশীলদের মধ‍্যে সবার আগে খোঁজ খবর নিতে হাজির হন।

জামায়াতের নির্বাচনী শ্লোগান ছিল, ‘আল্লাহর আইন চাই, সৎলোকের শাসন চাই’। জামায়াতের পক্ষথেকে জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও ২টি গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপালন করতে যেয়ে আব্বু সততা ও যোগ‍্যতার এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আব্বুর কাছে সততার বিষয়টি নিছক অর্থনৈতিক সততা ছিলনা বরং এটা ছিল কোরআনে বর্ণীত আমানতদারীতা। যার দাবী হল জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি সহকারে দায়িত্ব পালন করা। আম্মুর কাছে শুনেছি আব্বুর আমানতদারীতার উদাহরন, একবার উনার কাছে বাইতুল মালের কিছু টাকা জমা হলে আব্বু সেটা সংগঠনের একাউন্টে জমা দিতে বললেন। আম্মুর তখন নগদ কিছু টাকার দরকার ছিল। তাই আম্মু বললেন, ‘এই টাকাটা আমি খরচ করে আমার একাউন্ট থেকে সমপরিমান টাকা সংগঠনের একাউন্টে জমা করে দেই?’ আব্বু তখন বললেন এটা আমানতদারীতার বরখেলাপ, আমানতদারীতা হল তুমি সংগঠনের টাকা কোন অবস্থাতেই ব‍্যাক্তিগত টাকার সাথে মিলিয়ে ফেলবেনা। সংগঠনের টাকা সংগঠনের একাউন্টে জমা দিবে আর তোমার প্রয়োজনের টাকা নিজের একাউন্ট থেকে তুলে খরচ করবে। আব্বুর জেল জীবনেও আমি দেখেছি আমানতদারীতা রক্ষার ব‍্যাপারে তিনি কতটা সচেতন। একবার আমরা জেলে আব্বুর সাথে দেখা করতে গেলে আমার ভাতিজা জেলখানার একটি পানি খাওয়ার গ্লাস অসাবধানে ভেঙ্গে ফেলে। আব্বু তখন আমাদেরকে বললেন, পরবর্তী সাক্ষাতের সময় এই রকম একটি গ্লাস কিনে নিয়ে এসে জেল কর্তৃপক্ষকে দিত। আমরা পরবর্তীতে গ্লাস কিনে জেল কর্তৃপক্ষকে দিলে তারা অবাক হয়ে যায়।

আব্বু একদিকে যেমন অত‍্যান্ত বিনয়ী ছিলেন আবার একই সাথে প্রচন্ড আত্নমর্যাদাবোধ সম্পন্ন ছিলেন। তিনি কখনো নিজের ব‍্যাপারে বা সংগঠনের ব‍্যাপারে হীনমন‍্যতাবোধে ভুগতেন না। কেও কখনো বলতে পারবেনা যে আব্বুর মাঝে কোন অহংকার বোধ বা ইগো কাজ করত, কিন্তু তিনি নিজের আত্নসম্মানের বা তার সাংগঠনিক পজিশনের মর্যাদার বিষয়ে কখনোই ছাড় দিতেন না। আব্বু এ ব‍্যাপারে সংগঠনের নেতৃবৃন্দকেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিতেন। সংগঠনের কোন আন্চলিক পর্যায়ের দায়িত্বশীল প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরকে স‍্যার বলে সম্মোধন করলে আব্বু রেগে যেতেন। আব্বু সংগঠনের সেক্রেটারী জেনারেল থাকা কালে একবার কোন এক বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রদুতের সাথে নির্ধারিত বৈঠকে অংশগ্রহনের জন‍্য তার বাসভবনে গেলে আব্বুর গাড়ীকে ৫ মিনিট গেটে অপেক্ষা করতে বলা হয়।আব্বু বিষটি পছন্দ করলেন না, তিনি গাড়ী ঘুরিয়ে বৈঠকে অংশ না নিয়েই চলে আসেন। পরবর্তীতে সেই রাষ্ট্রদূত আব্বুর অফিসে এসে এ ব‍্যাপার ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

আল্লাহ তায়ালা আব্বুকে উনার কলিগদের থেকে তুলানামুলকভাবে লম্বা হায়াতই দান করেছিলেন, আব্বু ৭৫ বছর বয়সে শাহাদাত লাভ করেন। এক জীবনে একজন মানুষের ব‍্যাক্তিগত চাওয়া পাওয়ার সবটুকুই আল্লাহ উনাকে দান করেছিলেন, ছাত্রজীবনে ছাত্রসংগঠনের প্রধান, পরবর্তীতে জামায়তের প্রধান, এমপি, মন্ত্রী সর্বশেষে বিনা যুদ্ধে শাহাদাতের মৃত‍্যু। এর বাইরে দুনিয়ার সাময়িক অসুবিধা, জেল জুলুম নির্যাতন, এইগুলোতো সাধারন মানুষের ভাগ‍্যেও জোটে। আব্বুর এই নিয়ে কোন আফসোস ছিল না। আমাদের শেষ সাক্ষাতকারে তাইতো আমাদেরকে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে বলে গিয়েছিলেন আর বলে গিয়েছিলেন বেশী করে আমল করতে, আমল ছাড়া স্বয়ং নবী সা: তার কন‍্যার জান্নাতের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। শেষ সময়ে আব্বু অন‍্য যে কোন সময়ের চাইতে বেশী প্রশান্ত ছিলেন, আমাকে অত‍্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, মোমেন ফাঁসীর মন্চে কি পায়জামা না লুঙ্গী পরে যাব?

আব্বুর সাথে শেষবারের মত দেখা করে আমরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হয়ে আসলাম। আম্মু ও পরিবারের অন‍্য সদস‍্যদেরকে বাসায় যেতে বলে আমি আর খালেদ মিঠু ভাই আর মফিজ ভাইকে নিয়ে বেলালের গাড়িতে করে সাঁথিয়ার দিকে ছুটলাম। ফোনে ফোনেই মনমথপুরের পারিবারিক কবরস্থানে আত্নীয় স্বজনদের মাধ‍্যমে কবর খুড়ার ব‍্যাবস্থা করতে হল। খবর পেলাম রাস্তায় আওয়ামী লীগের গুন্ডারা ব‍্যারিকেড দিয়েছে লাশ নাকি পাবনায় দাফন করতে দিবেনা। আম্মু বারবার ফোনে জানতে চাচ্ছেন আমরা ঠিক আছি কিনা। আব্বুর শাহাদাতের সময় ঘনিয়ে আসছে আর আমরাও একমনে দোয়া এস্তেগফার পড়তে পড়তে রাতের আঁধারে ছুটে চলেছি, বেলাল রেডিওটা ছেড়ে দিল খবর শুনার জন‍্য, আমি বন্ধ করে দিতে বললাম। সার্বক্ষনিক বাজতে থাকা ফোনটা সাইলেন্ট মুডে দিয়ে দিলাম, অপরিচিত কোন কল ধরছিনা। আস্তে আস্তে চারিদিকে সবকিছু শুনসান নিরব হয়ে গেল। যমুনা সেতুর কাছাকাছি আসতেই মনটা হুহু করে উঠল, এই পথ ধরে কতবার আব্বুর সাথে সাঁথিয়ায় গিয়েছি। সামনে বরাবরের মত মিঠু ভাই আর পিছনে মফিজ ভাই। মাঝখানে শুধু আব্বু নেই। গাড়িটা থামাতে বললাম। পথের ধারে একটি মসজিদে অজু করে নিলাম। খালেদ বলল, ফাঁসি মনে হয় কার্যকর করে ফেলেছে। আমি কিছুই বললাম না। আমাকে শান্ত থাকতে হবে আব্বুর শেষ বিদায়টা যেন ভালভাবে হয় সেই ব‍্যাবস্থা করতে হবে। আব্বু মাঝে মাঝেই আমার সাথে অনেক বিষয়ে এডভান্স আলাপ করতেন। আব্বুর জানাযা নিয়ে জেলখানায়া যাওয়ার শুরু থেকেই বহুবার আমার সাথে আলাপ করেছেন। তিনি বলতেন, ওরাতো ফাঁসী দিলে রাতের বেলাই দিবে। তোর আম্মাকে কষ্ট করে রাতের বেলা সাঁথিয়ায় নেয়ার দরকার নেই। তুই আমার জানাযা পড়াবি। জানাযা পড়ার সময় ভাল দেখে একটা পান্জাবী পড়ে যাবি। আর যদি তোদের কে যেতে না দেয়, চাঁদু (আমার ফুফাতো ভাই) কে বলবি যেন আমার লাশটা রিসিভ করে। সিরাজগন্জ পার হয়ে খবর পেলাম পুলিশ মনমথপুরের রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়েছে, কোন গাড়ী ঢুকতে দিচ্ছেনা। তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল মুহতারাম ড. শফিক চাচা সিরাজগন্জে এসে আগেই অবস্হান নিয়েছিলেন। আমরা চাচাকে গাড়িতে তুলে নিলাম। পুলিশ গাড়ি থামাল, তবে আমরা পরিবারের সদস‍্য দেখে আমাদেরকে মনমথপুরে ঢুকতে দিল। ফজরের আগেই মনমথপুর লোকে লোকারন‍্য। মানুষ পুলিশি বাঁধা ডিঙ্গিয়ে বহু দূর দুরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে এসেছে। নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ করে কবরস্থানের সামনের ফসলের মাঠে জানাযার নামাজের আয়োজন করা হল। কোন ধরনের বিশৃংখলা যাতে না হয় সেজন‍্য সবাইকে লাশ আসার আগেই সকাল সকাল জানাযার জন‍্য মাঠে সারিবদ্ধ হয়ে যেতে বলা হল। এত মানুষের এক মাঠে কি আর জায়গা হয়? শোকাহত মানুষ তাই রাস্তার দুই ধারে দাড়িয়ে থাকল। প্রশাসন কয়েকবার লোকজনকে সরানোর জন‍্য হম্বিতম্বি করলেও এত মানুষ দেখে আর বেশী কিছু করার চেষ্টা করেনি। আব্বু শেষবাবরে মত জন্মভূমি মনমথপুরে ফিরে এলেন এম্বুলেন্স করে। সামনে পিছনে পুলিশের গাড়ি। আমি দস্তখত দিয়ে আব্বুকে রিসিভ করলাম। আমাদের কয়েকজনকে শেষ বারের মত আব্বুর চেহারা দেখার সুযোগ দিল। আব্বুর রক্তমাখা মুখটা শেষবারের মত ধরে দেখলাম, মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম, খালেদ একটু ইমোশনাশ হয়ে উঠল, আমি নির্বিকার। আব্বুর চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ছিল। ইচ্ছা করছিল একটু আঁচড়িয়ে দেই। আব্বুর পকেটে একটা ছোট চিরুনী থাকত, ঘন চুল দাড়ি গুলোকে তিনি সবসময় পরিপাটি করে রাখতেন। আমিতো আব্বুর মত এত পরিপাটি নই, আমার পকেটে কোন চিরুনীও থাকেনা। তাই শেষ বেলায় আব্বুর চুলগুলোকে আর পরিপাটি করে দিতে পারলামনা। একদিক দিয়ে ঠিকই আছে, জালেমেরা যেভাবে আব্বুকে শহীদ করেছে তিনি সেভাবেই রাব্বে করিমের ঘোষনা অনুযায়ী হাশরের মায়দানে উঠবেন ইনশাআল্লাহ।

প্রশাসনের সাথে কিছু বদানুবাদ হলেও জানাযা ও দাফন মোটামুটি নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হল। আমি আর খালেদ আব্বুকে কবরে নামালাম, সাদা কাফন ততক্ষনে তাজা রক্তে লাল হয়ে ঊঠেছে। আব্বুকে শেষবারের মত আরেকবার দেখার ইচ্ছা হলেও এত লোকের ভিড়ে সেটা আর সম্ভব হল না। মানুষকে আর নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই তাড়াতাড়ি দাফন করে ফেলতে হল। আব্বুকে দাদা দাদীর পাশে শুইয়ে রেখে বিদায় নিলাম। ছোটবেলায় প্রথম যখন মনমথপুরে আসি তখন বিদায়বেলায় দাদীকে আধোবোলে সদ‍্য কথা বলতে শিখা আমি নাকি বলেছিলাম, ‘দাদী দাদী আবার আসব’। এবার বিদায় বেলায় আব্বুর কানে কানে বলে গেলাম ‘আব্বু আব্বু আাবার আসব আপনার কোলে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকার জন‍্য’।

আব্বুর শাহাদাতের কয়েকদিন পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তৎকালীন জেল সুপার আমাকে ফোন করে উনার অফিসে আসতে বিশেষভাবে অনুরোধ করলেন। সাক্ষাতে তিনি বললেন, “আপনার আব্বা অত‍্যান্ত ধীরস্থির ভাবে কালেমা পড়তে পড়তে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, যাওয়ার আগে শুধু আমাকে কাছে ডেকে উনার চশমা আর ঘড়িটি হাতে দিয়ে বলেছেন, আমার ছেলে মোমেনের কাছে এই গুলো পৌছে দিবে। আপনার আব্বার আমানত আমি আপনাকে নিজ হাতে বুঝিয়ে দিব বলে আপনাকে আজকে আসতে বলেছি।”

আব্বুর আমাদের ভাইবোনদের প্রতি লিখিত শেষ অসিয়ত ছিল, “আমার প্রানের চেয়েও প্রিয় মুহসিনা, তারেক, মোমেন, খালেদ, খাদিজা ও তালহা। তোমাদের সকলের প্রতি রইল আমার প্রান উজাড় করা দোআ। তোমরা ভাই বোন মিলে মিশে থাকবে। আল্লাহ ও রাসূলের পথে চলবে। মায়ের খেদমত করবে। মায়ের মাঝেই আব্বুকে দেখতে পাবে। আর তোমাদের আম্মু যেন তোমাদের মাঝেই তোমাদের আব্বুকে দেখতে পায়। তোমাদের জন‍্যে সার্বক্ষনিক দোআয় নিয়জিত আব্বু।”

আব্বুর শাহাদাতের কিছুদিন পরে আব্বুর জেল জীবনের সুখ-দূ:খের সাথী মুহতারাম সাঈদী চাচা একদিন আব্বুকে স্বপ্নে দেখেন। চাচা বলেন, “তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে জায়নামাজেই শুয়ে পড়েছি। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি টের পাইনি। স্বপ্নে দেখি, আলো ঝলমলে বিশাল এক রুমের মাঝে নিজামী ভাই বসা। নাম না জানা অসংখ্য ফল-ফলাদি দিয়ে রুমটা ভরা। তিনি সেগুলো খাচ্ছেন আর কার সঙ্গে যেন কথা বলছেন। আমি রুমে ঢুকেই তাকে সালাম দিলাম। আমরা একে অপরের কুশল বিনিময় করলাম। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘নিজামী ভাই! এতো ফল আপনি কোথায় পেলেন! এগুলোর নাম কি?’ তিনি আমাকে বললেন, ‘এগুলোই তো নাজ নেয়ামত।’ এরপর আমার ঘুম ভেঙে গেল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ফজরের সময় হয়ে এসেছে।”

আব্বুর শাহাদাতের মধ‍্যদিয়ে আমার জীবনের একটা অধ‍্যায় শেষ হল। ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত আমার সবকিছুই ছিল আব্বু কেন্দ্রীক। সাথে ছিলেন অনেকে, কিন্তু বিশেষভাবে স্বরন করি মিঠু ভায়ের কথা, আব্বু তাকে ছেলের মত স্নেহ করতেন, উনিও পরম আন্তরিকতায় বিগত বছর গুলোতে সার্বক্ষনিক আব্বুর সেবা করে গিয়েছেন। মিঠু ভায়ের সহায়তা না পেলে কঠিন দিনগুলো আরও কঠিনতর হতে পারত বৈকি। শাহাদাতের পূর্বক্ষনে আব্বু মিঠু ভাইকে অসিয়ত করে গিয়েছেন, ‘একান্ত স্নেহের মিঠু! তুমি আমার পরিবারের একজন সদস‍্য হিসাবেই দীর্ঘদিন আন্তরিকভাবে যে মহযোগীতা করেছ, সেজন‍্য প্রান খুলে দোআ করি। আল্লাহ যেন তোমাকে দুনিয়া এবং আখেরাতে সর্বোত্তম পুরস্কার প্রদান করেন। খালেদ মোমেনদের মতই তুমি আমার সন্তানতূল‍্য। তুমি ওদের চার ভায়ের সাথে আপন ভায়ের মতই সম্পর্ক রক্ষা করে চলবে। তোমার পিতামাতা তোমাকে এলমেদ্বীন শেখার সুযোগ দিয়েছিলেন এটা আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত একথা কখনও ভুলবেনা। খোদাভীতি মুমিনের সর্বোত্তম পূঁজি, এই পূঁজি সন্চয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে এবং সত‍্যাশ‍্রয়ীদের সাথে থাকবে। তোমার চাচা।”

সেই কঠিন দিনগুলো নিয়ে ভবিষ‍্যতে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা আছে ইনশাআল্লাহ। তবে এবারের মত স্মৃতিচারনের ইতি টানছি। আমাকে ছাড়া আব্বু হয়ত আল্লাহর ইচ্ছায় ভালই আছেন। কিন্তু এই দুনিয়ায় চলতে গিয়ে পদে পদে আমি আজ আব্বুর অভাব বোধ করছি। আল্লাহই আমাদের প্রকৃত অভিভাবক। আল্লাহ যেন আমাদেরকে আজীবন দ্বীনের পথে অটল রাখেন আর ঈমানের সাথে মৃত‍্যু দিয়ে জান্নাতে আব্বুর সাথে মিলিত হওয়ার তাওফীক দান করেন, আমীন।।

ShareTweetSendShare

“আমাদের শহীদেরা সবচেয়ে বড় সম্পদ।
রেখে গেছে সাহসের দ্বিধাহীন সোজা রাজপথ”

Facebook Instagram X-twitter Youtube

আমাদের শহীদেরা

  • শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযম
  • শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী
  • শহীদ আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ
  • শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী
  • শহীদ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুস সুবহান
  • শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযম
  • শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী
  • শহীদ আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ
  • শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী
  • শহীদ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুস সুবহান

আমাদের শহীদেরা

  • শহীদ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ
  • শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান
  • শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা
  • শহীদ মীর কাসেম আলী
  • শহীদ আবদুল খালেক মন্ডল
  • শহীদ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ
  • শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান
  • শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা
  • শহীদ মীর কাসেম আলী
  • শহীদ আবদুল খালেক মন্ডল

© আমাদের শহীদেরা

Privacy Policy

No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • আমাদের শহীদেরা
    • শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযম
    • শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী
    • শহীদ আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ
    • শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী
    • শহীদ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুস সুবহান
    • শহীদ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ
    • শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান
    • শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা
    • শহীদ মীর কাসেম আলী
    • শহীদ আবদুল খালেক মন্ডল
  • আপনিও লিখুন
  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ

© আমাদের শহীদেরা