২০০১ সালে নাইন ইলেভেনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই মডারেট ইসলাম প্রজেক্টে নতুন মাত্রা যোগ হয়। ইসলামের কিছু মৌলিক পরিভাষা, জিহাদ, শরিয়া আইন, এগুলোকে জংগীবাদের সমার্থক করে ফেলা হয়। প্রেসিডেন্ট বুশ প্রকাশ্যে ঘোষনা দেয়, হয় তুমি আমাদের সাথে থাকবে, নতুবা শত্রু হিসাবে পরিগনিত হবে। এ সময় ইসলামী দলগুলোকে তাদের অবস্থান পরিস্কার করতে ক্লিয়ার ম্যাসেজ দেয়া হয়। বাংলাদেশে জামায়াত ইসলামী ক্ষমতার অংশীদার হওয়ায় তাদের ব্যাপারে আলাদা ভাবে নজর দেয়া হয়। বাংলাদেশ সরকারের উপর আফগানিস্তান ও ইরাকের অন্যায় যুদ্ধে অংশগ্রহন করার জন্য প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু জামায়াত ও বেগম জিয়ার দৃঢ়তার কারনে এই চাপ উপেক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল। আব্বু সংসদে পরিষ্কার ভাষায় আমেরিকার চাপিয়ে দেয়া এই ওয়ার অন টেররকে অন্যায় যুদ্ধ বলে সমালোচনা করেন। মডারেট ইসলামপন্থীরা এসময় যে কোন মূল্যে পশ্চিমা বিশ্বকে আস্থায় রাখার লক্ষে ইসলামী দলগুলোকে ব্যাপক আদর্শিক সংস্কারের ব্যাপারে চাপ দিতে থাকে। এসময় পশ্চিমা স্টেক হোল্ডাররা আব্বুকে বিভিন্ন মিটিংয়ে প্রায়ই প্রশ্ন করত, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে শরীয়া আইন কায়েম করবে কিনা। এক পর্যায়ে আব্বু সহ বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে লন্ডনে দাওয়াত দিয়ে এনে মডারেট ইসলামের সবক দেয়ার চেষ্টা করা হয়। আব্বুর অবস্থান এক্ষেত্রে পরিষ্কার ছিল, তিনি বলতেন, আমরা ইসলামী রাজনীতি করি আল্লাহর আইন কায়েম করার জন্যই। কারও যদি এই বিষয়ে ভূল বুঝাবুঝি থেকে থাকে আমরা সেটা দূর করার জন্য সংলাপে প্রস্তুত, কিন্তু কারও ডিকটেশনে আদর্শকে জলান্জলি দিতে প্রস্তুত নই । আব্বু এক্ষেত্রে একটা জিনিস বিশ্বাস করতেন এবং আমাদেরকে বলতেনও, তাগুতী শক্তিকে যতই ছাড় দেয়া হোক তাদের পরিপূর্ন অনুসরন না করা পর্যন্ত তারা কখনই সন্তুষ্ট হবেনা (সূরা বাকারা: ১২০)। সুতরাং আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে তাদেরকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টার কোন মানে নেই।
আসলে হয়েছেও তাই, বিশ্বব্যাপি ইসলামী আন্দোলনের কিছু অংশ পশ্চিমা শক্তিকে আস্থায় নেয়ার জন্য মডারেট ইসলামের প্রজেক্টকে সম্পূর্নরূপে প্রত্যাখান করতে পারে নাই। আজকে তাদের ভাগ্যও জামায়াতের থেকে ভিন্নতর নয়, বরং ক্ষেত্র বিশেষে আরও খারাপ। সুতরাং ইসলামই হল সমস্যা, যতক্ষন পর্যন্ত এর নাম নিশানা আমাদের মধ্যে থাকবে ততক্ষন পর্যন্ত তাগুতী শক্তির কাছে আমরা শত্রু হিসাবেই পরিগনিত হব। আব্বু এই বিষয়টিই উনার শেষকটি বছর বিভিন্ন লিখনী, বক্তৃতা বিবৃতির মাধ্যমে বুঝাতে চেষ্টা করেছেন, যে আমরা জংগীও না আমরা মডারেটও না। আমরা মধ্যপন্থী ইসলামী দল, আমরা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আল্লাহর জমীনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এই পথে চলতে গিয়ে কিছু লোক টিকতে না পেরে ডানে বামে ছিটকে পড়বে, কিছু লোক শাহাদাত বরন করবে, কিন্তু যারা শত বাধা বিপত্তির মুখে আল্লাহর উপর ভরসা করে সবর ও ইস্তিকামাতের সাথে টিকে থাকতে পারবে আল্লাহ তাদের হাতেই বিজয় পতাকা দান করবেন ইনশাআল্লাহ।
ইসলামী আন্দোলন ও মডারেট ইসলামের উপর আব্বুর একটি আলোচনা এই লিংকে দেখতে পারেন
বক্তব্যটি ২০০৮ সালে লন্ডন মুসলিম সেন্টারে এক কর্মী সমাবেশে দেয়া। ভিডিওটি আমার আনাড়ী হাতে রেকর্ড করা।
আমার দেখা আব্বুর জীবনীটাকে চার ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। জ্ঞান হওয়া থেকে ৯৩/৯৪ সাল পর্যন্ত আব্বু ছিল আমার কাছে ড্যাশিং হিরো। আব্বুর চেহারা, দৈহিক গড়ন, মাপা কিন্তু আকর্ষনীয়, জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেয়ার যোগ্যতা, সংগঠনে উল্কার মত উত্থান, নির্বাচনী এলাকায় উনার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা, সংসদের ভূমিকা, মাত্র ৩/৪ ঘন্টা ঘুমিয়ে সারাদিন কাজ আর অনেক সময় নিয়ে ইবাদত করার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা সবকিছু মিলে সন্তান হিসাবে আমার মত ১২/১৩ বছরের কিশোরের কাছে তিনি ছিলেন একজন পার্ফেক্ট হিরো। এর পরে এল গ্রহনের কাল, আব্বু শারীরীক ভাবে অসুস্থ হতে শুরু করলেন, পারিবারিক ভাবে আমরা কিছু বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়া শুরু করলাম, আন্দোলন, সংগঠনে আব্বুর সাথে সংখ্যাগরিষ্ট পলিসি মেকারদের কিছু বিষয়ে ভালই মতপার্থক্য দেখা দিল, পরিশেষে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আব্বুও হেরে গেলেন, সংগঠনও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে গেল। ১৬/১৭ বছর বয়সী আমি হঠাৎ করেই বুঝতে শুরু করলাম আব্বুতো একজন মানুষও বটে। ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছিল আব্বুর জীবনের আরেকটি পর্ব, যখন তিনি দ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে আবার উঠে দাড়িয়েছিলেন, শয্যাশায়ী অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সংগঠনের আমীর নির্বাচিত হলেন, এমপি, মন্ত্রী হলেন। যার একটা অংশে ২০০১ সাল পর্যন্ত আব্বুর পাশে থেকে দেখেছি শিখেছি, মানুষকে নিজের দুর্বলতাকে, সীমাবদ্ধতাকে জেনে বুঝে, সেটা অনুযায়ী পরিকল্পনা করে কিভাবে ভবিষ্যতের পথ তৈরী করে নিতে হয়, বিপদে কিভাবে আল্লাহর উপর ভরসা করে সবর করতে হয়, হকের উপর অবিচল থেকে বাতিলের মুকাবেলা করতে হয়। আব্বুর জীবনের শেষ অধ্যায়টি ছিল ২০০৫-৬ সালের দিকে অসুস্থতা, ২টি অপারেশন থেকে নিয়ে শাহাদাত পর্যন্ত, এ সময়ের একটা অংশে ২০১০ থেকে নিয়ে শাহাদাত পর্যন্ত আব্বুর অন্ধের যষ্ঠী আমি।
এই চারটি উত্থান পতনের অধ্যায়ে আমি আব্বুর ব্যাক্তিগত বিশ্বাস ও আমলী জিন্দিগীতে কোন পরিবর্তন দেখতে পাইনি। যেকোন পরিস্থিতিতে হকের উপর টিকে থাকা, সবর করা, দ্বীনের মৌলিক বিষয় গুলো ঠিক করার দিকে মনোযোগ দেয়া, সর্বপরি আল্লাহর কাছে ধর্না দেয়াটা ছিল আব্বুর জীবনের চালিকাশক্তি। এর কোন পরিবর্তন আব্বুর জীবনে আমার চোখে পড়েনি। আব্বু মন্ত্রী থাকা অবস্থায়ও যেমন কখনো তাহাজ্জুদ নামাজ কাযা করতেননা আবার জেলে যাওয়ার পরেও কাজা করতেন না। শত ব্যাস্ততা, অস্থিরতার মাঝেও আব্বুর নামাযে দাড়ালে উনার দুনিয়া থমকে দাড়াতো। নামাজে কখনো আব্বু তাড়াহুড়ো করতেন না। আব্বু পিঠে ব্যাথার কারনে যে কয় বছর শয্যাশায়ী ছিলেন, সেসময় অন্য কোনকিছুর চাইতে শুয়ে বসে নামায পড়ার বিষয়টা উনাকে বেশী কষ্ট দিত। কিছুটা সুস্থ হতেই আব্বু কষ্ট করে হলেও দাড়িয়ে নামাজ পড়তেন, পরিপূর্ন সেজদা দিতেন। জীবনের শেষ দিন গুলোতে বসা থেকে উঠতে গেলে মাথা ঘুরত কিন্তু কখন আব্বুকে বসে নামাজ পড়তে দেখিনি। নামাজের প্রতি আব্বুর অন্তরিকতা ছিল এমনই। আজও কানে বাজে নামাজে তেলাওয়াত করা আব্বুর ফেভারেট আয়াতগুলো। একাগ্র চিত্তে তিনি প্রায়ই নামাযে পড়তেন, “ইয়া আয়্যাতুহান নাফসুল মুতমাইন্নাহ, ইরজি’ই ইলা রাব্বিকি রাদিয়াতাম মারদিয়্যাহ, হে প্রশান্ত আত্না, ফিরে চল সন্তুষ্ট চিত্তে তোমার রবের দিকে।” আব্বুর কাছে শুনতে শুনতে এরকম কত আয়াত আমার মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। একটু সময় পেলে আব্বু সূরা আনআমের শেষ কটি আয়াত তেলাওয়াত করতেন, “কুল ইন্নানি হাদানি রাব্বি ইলা সিরাতিম মুসতাকিম…..বলো, আমার রব নিশ্চিতভাবেই আমাকে সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন ৷ একদম সঠিক নির্ভুল দীন, যার মধ্যে কোন বত্রুতা নেই,” এর পরবর্তী আয়াতের ইমানের ঘোষনাটি আব্বু যখন বলিষ্ট ভরাট কন্ঠে তেলাওয়াত করতেন, কুল ইন্না সলাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন.. বল আমার নামায, আমার কোরবানী, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য, যার কোন শরীক নেই৷ এরি নির্দেশ আমাকে দেয়া হয়েছে এবং সবার আগে আমিই আনুগত্যের শির নতকারী” আমার ক্লাস এইটের আরবী জ্ঞান দিয়েও এর মর্মার্থ বুঝতে পারতাম। উপলব্ধী করতে পারতাম অন্তরের কত গভীর থেকে দৃঢ়তার সাথে এই ঘোষনাটি আব্বু করছেন। কোরআন শরীফের দোয়া সংশ্লিষ্ঠ আয়াতগুলো, বিশেষভাবে সূরা আলে ইমরানের শেষের দিকের দুআ গুলো আব্বুর খুব প্রিয় ছিল, এই আয়াতগুলো পড়ার সময় আব্বু মাঝে মাঝে কেঁদে ফেলতেন, বিশেষ করে যখন তেলাওয়াত করতেন, রব্বানা ওয়া আতিনা মা ওয়াদতানা আলা রুসুলিক…”হে আমাদের রব! তোমরা রসূলদের মাধ্যেমে তুমি যেসব ওয়াদা করেছো আমাদের সাথে, সেগুলো পূর্ণ করো এবং কিয়ামতের দিন আমাদের লাঞ্ছনার গর্তে ফেলে দিয়ো না৷ নিসন্দেহে তুমি ওয়াদা খেলাপকারী নও৷” ইব্রাহীম আ: এর দুআগুলো আব্বুর বিশেষ ভাবে প্রিয় ছিল, এসংক্রান্ত সুরা আনআমের ৭৪ থেকে ৭৯ নং আয়াতগুলো, সূরা ইব্রাহীমের শেষের দিকের আয়াতগুলো আব্বু নামাযের মাঝে অনেক সময় তেলাওয়াত করতেন। নামাযের পর আব্বু লম্বা দুয়া করতেন। মাসনুন দুআ মুখস্ত করাটা আব্বুর একটা অবসেশন ছিল। আব্বু যখন ১৯৯৬-৯৭ দিকে শয্যাশায়ী, আব্বুকে কোন হাদীসের নতুন দুআ বের করে দিতে পারলে আব্বু খুব খুশী হতেন। আমরা প্রতিযোগিতা করে তখন দুআ মুখস্ত করতাম। সেই সময়ই সম্ভবত হিসনুল মুসলিম নামক মাসনুন দুআর বইটি বাজারে আসে। আমি বইটি আব্বুকে দিলে আমার আগেই আব্বুর এর অধিকাংশ দুআ মুখস্ত করে ফেলেন। দুআ মুখস্তের ব্যাপারে আব্বুকে পিছনে ফেলা আমার পক্ষে কখনই সম্ভব হয় নাই। বিপদের দিনগুলোতে আব্বু মাঝে মাঝে আমাকে কুনুতে নাযেলা পড়ার জন্য ইমামতি করতে বলতেন, সেই সময়গুলোতে দোয়া কতটুকু মুখস্ত করতে পেরেছি তার একটা পরীক্ষা হয়ে যেত। আব্বু আমার ভুলগুলো নামাজের পরে সবার অগোচরে সুন্দর করে ধরিয়ে দিতেন, মাঝে মাঝে অনুযোগ করতেন দোয়া গুলো ভালভাবে কেন মুখস্ত করিনা। জীবনের শেষের দিকে জেলখানায় দেখা করতে গেলে আমাকে মাঝে মধ্যে দুআ পড়ে মাথায় ফু দিয়ে দিতে বলতেন, আবার কখন কিছু দুআ লিখে দিয়ে বলতেন, তুইও পড়বি আর সবাইকে পড়তে বলবি।
রমাদান মাসের শেষ দশদিন ছিল আব্বুর কাছে বিশেষ কিছু। দুনিয়ার সব ঝামেলা পিছনে ফেলে আব্বু এই সময়ে এতেকাফে বসে যেতেন, অধিকাংশ সময়ে মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিসের কাছের মসজিদটিতে বসতেন। আব্বুর এতেকাফের সাথী হতেন মরহুম মকবুল আহমেদ চাচা, ডা: আব্দুস সালাম চাচা, মাজাহার চাচা, ফজলু চাচার আব্বা, মুজিবুর রহমান চাচা ও আরও অনেকে। এই সময়ে আব্বুর জন্য ইফতার নিয়ে যাওয়া, আব্বুর সাথে ইফতার করা আমাদের জন্য ছিল বিশেষ কিছু। একটু বড় হলে দুএকটি রাত আব্বুর সাথে মসজিদে কাটাবার চেষ্টা করতাম। আব্বু তাফসীর করতেন আমরা শুনতাম। সৌদী আরবে পড়তে যাওয়ার আগের বছর শেষবার আব্বুর সাথে এক রমজানে রাত কাটানোর সুযোগ হয়েছিল। আব্বু সূরা লোকমানের কয়েকটি আয়াতের তাফসীর করেছিলেন আমাদের জন্য। যা ছিল হযরত লোকমানের তার সন্তানের প্রতি নসিহত। মনে আছে আমরা তাওহীদ ও শিরিকে বিষয়ে অনেক আলোচনা করেছিলাম। আব্বু বললেন তাওহীদের বিষয় গুলো বুঝতে হলে মক্কী সুরা গুলা ভালভাবে পড়তে হবে। ঐ রাতে আমি নাস ফালাকের তাফসীর তাফহীমুল কোরআন থেকে পড়েছিলাম, আব্বু রাব্বিন্নাস, মালিকিন্নাস ও ইলাহিন্নাসের ব্যাপারে বেশ অনেক্ষন আলোচনা করলেন। আল্লাহর বিশালত্ব তার সৃষ্টির মাধ্যমে অনুধাবন করার গুরুত্ব বুঝাতে আমপারার আরও কতগুলো সূরা পড়তে বললেন। সেই রাতটি আসলেই অনেক অর্থবহ আর শিক্ষনীয় ছিল আমারা জীবনে। আব্বু কখনই সারারাত জেগে ইবাদত করতেন না, রাসূল সা: সুন্নত অনুযায়ী কিছু সময় ঘুমিয়ে আবার উঠে ইবাদত করতেন। আমি ঘুমালে আর উঠতে পারতামনা। আব্বু এটা পছন্দ করতেন না, তিনি বলতেন, তাহাজ্জুতের ট্রেনিংটাই হল ঘুম থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উঠতে পারার ট্রেনিং।
মানুষের জীবনের উত্থান পতনে মানুষের চিন্তা চেতনায় আচার আচরনে আকাশ পাতাল পরিবর্তন খুবই স্বাভাবিক, কিন্তু বড় মানুষের, প্রকৃত ঈমানদাররের পরিচয় পাওয়া যায় বিপদকালে তার চরিত্রে। প্রকৃত আদর্শবাদী মানুষ বিপদে পড়ে আদর্শের ব্যাপারে হীনমন্যতায় ভোগে না। কিন্তু যাদের অন্তরে আদর্শ ঠিকভাবে শিকড় গড়তে পারেনাই, খারাপ সময়ে তারাই চিন্তায় পড়ে যায়, আদর্শের ব্যাপারে সংশয় আচ্ছন্ন হয়। আব্বু প্রায়ই বলতেন, যারা আন্দোলন থেকে ছিটকে যায় দেখবি কোরআনের সাথে তাদের সম্পর্কের ঘাটতি আছে। আব্বুদের জেনারেশনে যারা সংগঠনে যুক্ত হয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশই দ্বীন খুজতে গিয়ে, দ্বীনের পথে চলতে গিয়েই সংগঠনেকে পেয়েছিলেন, যার কারনে সংগঠনকে উনারা দ্বীনের চশমা দিয়ে দেখতেন। তৎপরবর্তী আমরা যারা জামাতী জেনারেশন, আমাদের অনেকেই বিভিন্ন কারনে দ্বীনকে যেন সংগঠনের চশমায় দেখতে চেষ্টা করি, রাজনীতির মাপকাঠিতে বিশ্লেষন করার প্রয়াস পাই। আব্বুর কাছে বিষয়টা কোরাআনের সাথে যথাযথ সম্পর্কর ঘাটতির পরিনতি মনে হত।