আজ ১১ই মে ২০১৭ সাল। আজকের এইদিনে একবছর পূর্বে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমীর বাংলাদেশের প্রাক্তন কৃষি ও শিল্পমন্ত্রী মাওলানা নিজামী শাহাদাতবরণ করেন। আজকের এই দিনে আমার অনেক কথাই মনে পড়ছে। মনে পড়ছে সুদীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে আমি যখন ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে পৌঁছলাম, তখন তিনি কিভাবে আমাকে স্বাগত জানালেন।
১লা ডিসেম্বর ১৯৮৫ সাল। শীতের সকাল। বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য স্বপরিবারে লন্ডন থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলাম। অনেক আত্মীয়-স্বজন স্বাগত জানাতে আসবেন জানতাম। কিন্তু বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাইরে এসে দেখলাম সাদা পাঞ্জাবী-পাজামা এবং চাদর গায়ে দাঁড়িয়ে আছেন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। তখন তিনি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। আর আমি জামায়াতের প্রাথমিক সদস্যও নই। আমাকে বললেন, অধ্যাপক গোলাম আযম বলেছেন, তোমাকে নিয়ে মগবাজার কেন্দ্রীয় জামায়াত অফিসে যেতে হবে। স্ত্রী এবং শিশু-কিশোর তিন ছেলে-মেয়েকে ধানমন্ডির এক আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে আমি তাঁর গাড়ীতে করে মগবাজারের আল-ফালাহ ভবনে পৌঁছলাম। ভবনের দোতলায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বৈঠক চলছে। অধ্যাপক গোলাম আযম সভাপতিত্ব করছেন। নবীন ও প্রবীণ অনেক নেতৃবৃন্দ সেখানে উপস্থিত। তাদের অনেকেই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। মাওলানা নিজামী (যাকে আমরা নিজামী ভাই বলে ডাকতাম)সহ পাঁচজন শাহাদাতবরণ করেছেন।
নিজামী ভাইয়ের ব্যক্তিত্ব ছিল অত্যন্ত অমায়িক। তিনি ছিলেন মৃদুভাষী। যতদূর মনে পড়ে তার সাথে লন্ডনে চারবার একসাথে সফর করেছি। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাজ্যের একটি ইসলামী সংগঠনের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সমস্যা চলছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য জামায়াতের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পাঠান হয়। মাওলানা একে এম ইউসুফ, নিজামী ভাই এবং আমি। প্রতিনিধি দলে আমার অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা না। কিন্তু যেহেতু আমি দীর্ঘদিন ইংল্যান্ডে ছিলাম এবং ঐ সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম, সেকারণেই প্রতিনিধি দলে আমার অন্তর্ভুক্তি। বিমানে উঠে নিজামী ভাইয়ের সাথে অনেক কথা হলো। দেশের ভবিষ্যৎ, জামায়াতের ভূমিকা ইত্যাদি। তখন আমি জামায়াতের রোকন (সদস্য) হইনি। এর একটা বিশেষ কারণ ছিল। তখন যাদের ঘরে টেলিভিশন থাকত তাদেরকে সদস্য করা হতো না। আমি ঘরে টেলিভিশন রাখার পক্ষে নিজের যুক্তি উপস্থাপন করলাম। তিনি আমার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনলেন। অতঃপর তার বক্তব্য শুনে আমি সত্যিই স্তম্ভিত হয়েছিলাম। তিনি বললেন, আমরা জামায়াতে ইসলামীতে এখনো সমাজের উপর শ্রেণীর লোকদেরকে একোমোডেট করার জন্য তৈরি করতে পারিনি, তুমিও তাদের একজন। যদিও আমি সমাজের উপরের শ্রেণীর লোকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না বা এখনো নই, কিন্তু নিজামী ভাই যে একজন বাস্তবধর্মী মানুষ ছিলেন এবং বাস্তবতাকে অসংকোচে মেনে নিতে পারতেন, এটাই তার একটা প্রমাণ।
যুক্তরাজ্যের ইসলামী সংগঠনটির সমস্যাটি ছিল বেশ জটিল। প্রতিনিধি দলের প্রধানের চাইতে তিনি অতি সহজেই সমস্যার গভীরে পৌঁছতে পেরেছিলেন। কিন্তু কথাবার্তা তিনি অত্যন্ত সংযতভাবে বলছিলেন। নেতার থেকে আগ বাড়িয়ে কিছু বলেননি যাতে করে নিজেদের মাঝে কোন ভুল বুঝাবুঝি না সৃষ্টি হয়। তিনি সর্বদা প্রতিনিধি দলের প্রধানের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।
১৯৮৮ সালে তিনি জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হবার কিছুদিন পরে লন্ডনের উদ্দেশে এক সফরে বিমানে উঠে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল হিসাবে জামায়াত এবং দেশকে নিয়ে আপনার ভিশন কি? তার জবাবে কোন কৃত্রিমতা ছিল না। সাদামাটাভাবে বললেন, “আমি একজন সাধারণ মানুষ, আমার বিদ্যাবুদ্ধিতে যা কুলায় তাই আমি করব।” তার এই অকৃত্রিমতার স্বাক্ষর তিনি রেখে গেছেন তার জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত; ২০১৬ সালের ১১ই মে সন্ধ্যাবেলায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পরিবারের সাথে তার শেষ কথোপোকথনে।
নিজামী ভাইয়ের প্রাথমিক শিক্ষা হয়েছে মাদরাসায়। তিনি ঢাকা আলিয়া থেকে কামিল পাস করেছেন। তিনি খুব ভাল ছাত্র ছিলেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি তৎকালীন ইকবাল হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। ইংরেজি ভাষায় খুব দক্ষতা না থাকলেও তিনি মোটামুটি ইংরেজি বলতে পারতেন। ঐ সফরে লন্ডনে বসবাসরত বিশ্বের অন্যান্য দেশের ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ তার সাথে দেখা করতে আসেন এবং তিনি নিজেই তাদের সাথে ইংরেজিতে আলাপ-আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। তাদের কথা বুঝতে এবং নিজের কথা তাদেরকে বুঝাতে তাকে কোন বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু একটা মজার ঘটনা ঘটল যখন তাকে নিয়ে পূর্ব লন্ডন থেকে ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সে নির্বাচিত এমপি পিটার শোর সাথে দেখা করতে গেলাম। পিটার শোর এর সাথে আমার পরিচয় দীর্ঘ দিনের। প্রায় প্রতিটি লন্ডন সফরে তার সাথে সাক্ষাৎ করি। এইবার নিজামী ভাইকে নিয়ে আরও দু’একজন বন্ধু-বান্ধবসহ তার সাথে দেখা করতে হাউস অব কমন্সে গেলাম। তিনি আমাদেরকে টেমস নদীর পাড়ে অবস্থিত একটি ক্যাফেটারিয়ায় নিয়ে গেলেন। পিটার শোর এবং নিজামী ভাই দুইজনই ইংরেজীতে কথা বলছেন। কিন্তু কেউ কারও ইংরেজী বুঝতে পারছেন না। তারপর আমাকে দোভাষীর দায়িত্ব পালন করতে হলো।
তিনি একজন ভারসাম্যপূর্ণ চিন্তার অধিকারী ছিলেন। ২০১০ সালের ২৯ জুন তিনি গ্রেফতার হন। মানবতা বিরোধী অপরাধে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় ২৮শে মে ২০১২ সালে। অতঃপর তার বিরুদ্ধে বিচার কাজ শুরু হয়। প্রধান কৌসুলী হিসাবে ট্রাইব্যুনালে তার মামলা পরিচালনা করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল।
২০১৩ সালের কোন একসময় মরহুম সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী মামলা থেকে তার আইনজীবী প্রত্যাহার করে নেন। তার বক্তব্য ছিল বিচারের রায় তো আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে আছে। সুতরাং আইনজীবীর মাধ্যমে বিচারকার্য পরিচালনা করা অর্থহীন। এর প্রভাব জামায়াতের অভিযুক্ত নেতৃবৃন্দের উপরও পড়ে। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা করছিলেন যে, আইনজীবীর মাধ্যমে বিচার কার্য পরিচালনা করে কেন আমরা এই বিতর্কিত বিচার প্রক্রিয়াকে বৈধতা দিচ্ছি। এই অবস্থায় ট্রাইব্যুনালে একদিন আমি নিজামী ভাই, মুজাহিদ ভাই এবং কামারুজ্জামান ভাইকে বলালাম: আইনজীবীরা মামলা পরিচালনা করেন তাদের মক্কেলের পরিষ্কার এবং সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার ভিত্তিতে। আপনারা যদি মনে করেন এই মামলা থেকে আইনজীবীদেরকে প্রত্যাহার করবেন তাহলে আগামীকাল থেকে আমরা আর ট্রাইব্যুনালে আসব না। যতটুকু আমার মনে পড়ে কামারুজ্জামান ভাই বললেন, কোর্টের এই পরিবেশে মামলা পরিচালনা করে কি লাভ? মুজাহিদ ভাই বললেন: আমি চিন্তা করে বলব। নিজামী ভাই সরাসরি এবং অত্যন্ত সহজেই বলে ফেললেন: রাষ্ট্রপক্ষকে একতরফাভাবে মামলা পরিচালনা করতে দেয়াটা সঠিক হবে না। মরহুম সালাহ উদ্দিন চৌধুরী নিজে দুচারদিন মামলা পরিচালনা করে পুনরায় আইনজীবী নিয়োগ করেন। শেষ পর্যন্ত সুপ্রীম কোর্টে তার আপীল এবং রিভিউ দুটা মামলাই সিনিয়র আইনজীবী জনাব খন্দকার মাহবুব হোসেন পরিচালনা করেন।
জামায়াত নেতৃবৃন্দের মামলা আইনজীবীদের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে কিনা এ নিয়ে জামায়াতের ভিতরে এবং বাইরে বেশ গুঞ্জন ছিল। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের অনেক আইনজীবীও (যারা জামায়াতের সাথে সম্পৃক্ত নন) এই প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল এভাবে বিতর্কিত এই আইনী প্রক্রিয়াকে বৈধতা প্রদান করা হচ্ছে।
আসল কথা হচ্ছে যারাই ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করেছিলেন, তাদের সকলের মতই ছিল আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা পরিচালনার পক্ষে। অর্থাৎ তারা সকলেই নিজামী ভাইয়ের সাথে একমত হয়েছিলেন। শুরুতে আমরা সিনিয়র আইনজীবী কেউই ট্রাইব্যুনালে যাইনি। আমাদের পক্ষ থেকে এডভোকেট তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল মামলা পরিচালনা করছিল। উল্লেখ্য যে, ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে আমি যেদিন প্রথম ট্রাইব্যুনালে গেলাম, বিএনপির বারের শীর্ষ পর্যায়ের আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, সুপ্রিম কোর্ট বারের তৎকালীন সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, এককালীন বারের সভাপতি জনাব জয়নাল আবেদীন, মি: নিতাই রায় চৌধুরীসহ আরও অনেক আইনজীবী আমাদের সাথে ছিলেন। পরবর্তীকালে জনাব খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ অনেকেই আমাকে বলেছিলেন: “আপনাদের এই মামলা থেকে প্রত্যাহার করা উচিত।”
আমেরিকার রাষ্ট্রদূতের বাসায় এক নৈশভোজে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদও আমাকে এই কথাটা বলেন। আইনজীবী উইথড্র না করার ব্যাপারে আমি তখন তাকে তিনটি যুক্তি দিয়েছিলাম; এক: আমাদের মক্কেলদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সকল যে সম্পূর্ণ মিথ্যা, সারবত্তাহীন এবং যে আইনে বিচার হচ্ছে তা আমাদের দেশীয় আইনের মাপকাঠি এবং আন্তর্জাতিক মানদন্ডের অনেক নিচে তা প্রমাণ করা। দুই: আমাদের মক্কেলরা চান যে, আমরা এই বিচারকার্য পরিচালনা করি। তিন: বিচারকার্য যেন তড়িঘড়ি করে শেষ করা না হয়। আমার এই কথাগুলো শুনে মওদুদ ভাই বলেছিলেন: “আমরা যদি ভাবাবেগ নিয়ে চিন্তা করি তাহলে এই মামলা থেকে উইড্র করা উচিত। কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলে এই মামলা থেকে প্রত্যাহার করা ঠিক হবে না।”
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মাওলানা নিজামী তার শাহাদাতবরণের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় ৬ বছর কারাগারে ছিলেন। ট্রাইবুনাল থেকে সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত তার মামলার বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন আদেশ এবং রায় হয়েছে। কোন সময় তিনি এই মামলা থেকে আইনজীবী প্রত্যাহারের কথা বলেননি। তিনি যে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারতেন এটা তার একটি প্রমাণ।
চিন্তার ক্ষেত্রে ভিন্ন মতামত অবলম্বনকারীদের দৃষ্টিভঙ্গী তিনি বুঝতে পারতেন এবং এ ব্যাপারে তিনি অনেক উদার ছিলেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতেন না। ২০০৮ সালের একটি ঘটনা। লন্ডনে ছোট-খাট পরিসরে বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনসমূহের নেতৃবৃন্দের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক খুরশিদ আহমদ, মালয়েশিয়ার ইসলামী আন্দোলন পাস-এর তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন মাতইসা, তুরস্কের সাদাত পার্টির তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট (বর্তমান প্রেসিডেন্ট) তেমিল কারামাল্লাহওগলুসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। মাওলানা নিজামী ছিলেন প্রধান অতিথি। আমিও সেখানে আমন্ত্রিত ছিলাম। ঐ সম্মেলনে আমরা উভয়েই লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করি। কিছু কিছু ব্যাপারে বিশেষ করে আন্দোলনে মহিলাদের ভূমিকার ব্যাপারে তাঁর সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করি। এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সহনশীল। আমার বক্তব্যের ব্যাপারে তিনি কোনদিন কোন উষ্মা প্রকাশ করেননি। এটাই ছিল তার সর্বশেষ বিলাত সফর। ঐ যাত্রায় আমি প্রথমে লন্ডন পৌঁছি, তারপর তিনি সস্ত্রীক লন্ডনে পৌঁছেন। তিনি এর আগে বেশ কয়েকবার যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু ঐবার ব্রিটিশ ইমিগ্রেশন তার সাথে ভাল আচরণ করেনি। দেশে ফেরার সময় তিনি আমার সাথে একসাথে ভ্রমণ করতে চাইলেন যাতে করে কোনরকম বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে না হয়। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমানে এটাই ছিল তার সাথে আমার সর্বশেষ সফর। দেশে ফিরে এসে কোন একটা বিষয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিসে একান্তভাবে তাঁর গঠনমূলক সমালোচনা (মুহাসাবা) করলাম। আমি আশ্চর্যের সাথে লক্ষ্য করলাম আমীর এ জামায়াত হয়েও তিনি অত্যন্ত খোলামনে এবং অকপটে বিষয়টি স্বীকার করে নিলেন। দুঃখের বিষয় যে আজকে অনেক ক্ষেত্রেই এধরনের খোলামেলা আলোচনার পরিবেশ নেই।
আন্দোলন সংগ্রামে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার সাথে আমার মতের মিল ছিল। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে আমি তার সাথে দ্বিমত পোষণ করতাম। যেসকল বিষয় নিয়ে দ্বিমত ছিল, সেগুলো নিয়ে তার সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে কখনই সমস্যাবোধ করিনি। তিনি ভিন্নমতকে বুঝতে ও সমন্বয় করতে চেষ্টা করতেন। তিনি ছিলেন মহিলাদের সম্পূর্ণভাবে মুখ ঢাকার (নেকাবের) পক্ষে। আমি নেকাবের বিপক্ষে নই, কিন্তু আমি মনে করি মুখ খোলা রেখে হিজাবও সম্পূর্ণ ইসলামসম্মত। শুধুমাত্র হিজাব এবং নেকাবেব মাধ্যমে কারও তাকওয়া পরিমাপ করা যাবে না। এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ হচ্ছে মিসরের ইসলামী আন্দোলনের অগ্রসেনানী হামিদা কুতুবের জীবন। তিনি তার ভাই সাইয়েদ কুতুব শহীদের সাথে অভিযুক্ত হন এবং তাঁর ভাইয়ের ফাঁসী কার্যকর হওয়ার পর ৬ বছর ১০ মাস মিসরের কারাগারে ছিলেন। ১৯৭২ সালে তিনি জেল থেকে বের হন। ১৯৭৬ সালের গ্রীষ্মকালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ছাত্র সংগঠন ফসিস-এর কনফারেন্সে তার সাথে আমার সাক্ষাতের সুযোগ হয়। তিনি নিকাব পড়তেন না কিন্তু হিজাব করতেন। কারাগারে রাতদিন বইয়ের সম্মানিতা লেখকও শুধু হিজাব করতেন, নিকাব পড়তেন না। একদিন জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিসে বসে নিজামী ভাইয়ের সাথে এ বিষয়ে আমার কথা হচ্ছিল। আমি আমার যুক্তি-প্রমাণ তার সামনে তুলে ধরার পর, তিনি বিষয়টির একটি উত্তম সমাধান দিয়েছিলেন। কিভাবে মহিলারা হিজাব করলে নিকাবের কাছাকাছি হয় তার একটি বাস্তব উদাহরণ তিনি আমাকে দেখালেন। দুটি বিবদমান বিষয়কে সমন্বিত করার তার যে একটা অসাধারণ গুণ ছিল, এর প্রমাণ আমি সেদিন পেয়েছিলাম।
কৃষিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় একবার তিনি দেশের বাইরে খুব সম্ভবত ইতালির রাজধানী রোমে একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। এই সফরে তার সফর সঙ্গী ছিলেন বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্সের অন্যতম একজন প্রতিনিধি বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী জনাব আব্দুর রউফ চৌধুরী। মরহুম জনাব আ: রউফ চৌধুরী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীধারী এবং পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মরহুম বেনজীর ভুট্টো তার সহপাঠী ছিলেন। অনেক মামলায় জনাব রউফ চৌধুরীর আইনজীবী হিসাবে কাজ করার সুযোগ আমার হয়েছিল। আইন আদালতের অঙ্গনের বাইরেও তাঁর সাথে আমার সম্পর্ক ছিল। তিনি নিজামী ভাইয়ের কোমল ব্যাবহারের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
নিজামী ভাই দুই বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে তিনি প্রথম নির্বাচিত হন এবং সংসদে জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলের নেতৃত্ব দেন। এর আগে সংসদে বক্তৃতা করার কোন সুযোগ তাঁর জীবনে আসে নাই। কিন্তু সংসদে তাঁর বক্তব্য ছিল অত্যন্ত ধীরস্থীর এবং ভারসাম্যপূর্ণ। হাইকোর্টের বারান্দায় একদিন সিনিয়র আইনজীবী জনাব খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমদ ( তিনি বাংলাদেশের সেরা আইনজীবীদের মধ্যে একজন ছিলেন) আমাকে বললেন: “এটা অনেকটা আশ্চর্যের ব্যাপার যে মাওলানা নিজামী কাউকে কটাক্ষ বা আঘাত না করে অত্যন্ত শালীন ভাষায় সংসদে নিজের বিচার বিবেচনাপূর্ণ বক্তব্য পেশ করতে পারেন।”
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এবং প্রাক্তন বিচারপতিদের সাথে সাক্ষাতের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এক সন্ধ্যায় আমি তাকে নিয়ে প্রাক্তন বিচারপতি কে এএম সোবহান সাহেবের বাসায় যাই। এর কিছুদিন পর বিচারপতি কে এম সোবহান আমাকে বললেন- কোন এক জেলার আওয়ামী লীগের একজন নেতা তাঁকে বলেছেন- মাওলানা নিজামী অন্যকোন দলকে আক্রমণ না করে অত্যন্ত সুন্দরভাবে তাঁর বক্তব্য পেশ করেছেন। ৫ম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ সদস্য প্রয়াত শুধাংসু শেখর হালদার ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে খানিকটা অসৌজন্যমূলক বক্তব্য রেখেছিলেন। এতে করে সংসদে বেশ কিছুটা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। হালদার বাবু অনেকটা বেকায়দায় পড়েন। শেষ পর্যন্ত মাওলানা নিজামী তার সাহায্যে এগিয়ে আসেন। সেই সময়ে আমরা কয়েকজন বন্ধু একসাথে ধানমন্ডি লেকের পাশে মর্নিংওয়াক করতাম। আওয়ামী সমর্থক আমার একজন ব্যারিস্টার বন্ধু (যিনি পরে বিচারপতি হয়েছিলেন) হাসতে হাসতে বললেন, শেষ পর্যন্ত নিজামী সাহেবই হালদার বাবুকে বাঁচিয়ে দিলেন।
ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিরুদ্ধে সর্বমোট ১৬টি অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্যে একটি অভিযোগ ছিল বুদ্ধিজীবী হত্যা সংক্রান্ত। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনে নাই। বিলাতের নামকরা সাময়িকী দি ইকোনোমিস্ট স্কাইপ কেলেংকারীর সকল ঘটনা ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশ করে। ইকোনোমিস্টকে অনুসরণ করে দৈনিক আমারদেশ পরপর তিনদিন তৎকালীন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি জনাব নিজামুল হক নাসিমের সাথে ব্রাসেলসে অবস্থানরত আইনজীবী আহমদ জিয়াউদ্দিনের কথোপকথন হুবহু প্রকাশ করে।
স্কাইপ কেলেংকারীর পর যে সমস্ত নথিপত্র আমাদের হাতে আসে তা থেকে দেখা যায় ২১শে মে ২০১২ সালে ট্রাইব্যুনালের মাননীয় চেয়ারম্যানের প্রস্তাবিত অভিযোগ গঠন আদেশের খসড়া আইনজীবী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের কাছে ইমেইল করেন। তাতে মাত্র ১৫টি অভিযোগ ছিল, বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগটি পরে আহমদ জিয়াউদ্দিন যোগ করেন।
বিচারপতি নাসিম গণআদালতের তদন্ত কমিটির সদস্য হয়েও ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি হিসাবে বিচারকার্য পরিচালনা করেন। যদিও চূড়ান্ত রায় দেয়ার পূর্বে তিনি পদত্যাগ করেন। রাষ্ট্রপক্ষ সর্বমোট ২৬জন সাক্ষী উপস্থাপনের সুযোগ পায়। মাওলানা নিজামীর ১৬টি অভিযোগের বিরুদ্ধে মাত্র ৪জন সাক্ষী উপস্থাপনের সুযোগ দেয়া হয়। তিনি যে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এতে কোন সন্দেহ নেই।
তার বিরুদ্ধে আনীত ১৪ নং অভিযোগ ছিল তিনি সূরা তাওবার ১১১-১১২ নং আয়াতের তাফসীর (ব্যাখ্যা) করে মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছেন। ভাবতে অবাক লাগে! কেমন করে আমাদের রাষ্ট্রপক্ষের বিজ্ঞ কৌঁসুলিরা তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনতে পারলেন! তাহলে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যারা সূরা তাওবার এই আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন তারা কি অপরাধী? নুরেমবার্গ থেকে শুরু করে কম্বোডিয়া পর্যন্ত কোন দেশের যুদ্ধাপরাধের আইনের সংজ্ঞায় এই অভিযোগ যে পড়ে না তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০১২ সালের ১১ ডিসেম্বর বিচারপতি জনাব নাসিম পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগের পর বিচারপতি জনাব এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে এই ট্রাইব্যুনালের সামনে আমি ২ দিন ধরে নিজামী ভাইয়ের পক্ষে সাবমিশন রাখি। ১৪ নং অভিযোগের জবাবে (সূরা তাওবা সংক্রান্ত) কি সাবমিশন রেখেছিলাম, তা আজ আমার মনে নেই। (অবশ্য নিজামী ভাইকে এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল দোষী সাব্যস্ত করেনি)। তবে একটা কথা আজ মনে পড়ছে – জানি না তা কতটা প্রাসঙ্গিক- শহীদ নিজামীর শাহাদাতের প্রায় অর্ধশতাব্দী পূর্বে শাহাদাতবরণকারী তার’ প্রিয় সাথী’ শহীদ মালেকের কাছে সূরা তাওবা ছিল খুবই প্রিয়।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মাননীয় বিচারপতি জনাব এটিএম ফজলে কবীর ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তারিখে নিজামী ভাইয়ের মামলার রায় না দিয়েই অবসরে যান। ফলে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি জনাব ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। আব্দুল কাদের মোল্লা ভাইয়ের শাহাদাতের ৫ দিন পর আমি মাত্র ২ সপ্তাহের জন্য ২০১৩ সালের ১৭ই ডিসেম্বর লন্ডনের পথে ঢাকা ত্যাগ করি। আজ পর্যন্ত আমার আর দেশে ফেরা হয় নি। আমি বিলাতে নির্বাসিত জীবন যাপন করছি। কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে বেদনাদায়ক হল যে, বিচারপতি জনাব ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে গঠিত ২য় ট্রাইব্যুনাল, সুপ্রীম কোর্টে আপীল এবং সর্বশেষ রিভিউ শুনানিতে নিজামী ভাইয়ের কৌঁসুলী হিসাবে দায়িত্ব পালনের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছি।
এটা সত্য যে, নিজামী ভাই পাকিস্তানের অখণ্ডতায় বিশ্বাসী ছিলেন। সেজন্য তাঁর বিরুদ্ধে ১৯৭২ সালে দালাল আইনে অভিযোগ আনা যেত। কিন্তু দালাল আইনের অধীনে তাঁর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনা হয় নি। ১৯৮৬ সালের অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রথম অংশগ্রহণ করেন এবং বিপুলসংখ্যক ভোট লাভ করে জাতীয় রাজনীতিতে সম্ভাবনাময় নেতা হিসাবে আভির্ভূত হন। এই নির্বাচনের পরেই তার বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ উঠে যে, তিনি আল বদরের কমান্ডার ছিলেন। মানবতা বিরোধী অপরাধের যে সব অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে সেগুলো অসত্য এবং তার কোন আইনগত ভিত্তি নেই। বিচারকার্য যদি আন্তর্জাতিক মানদ- অথবা দেশীয় আইন অনুযায়ী, যেখানে বাংলাদেশের সংবিধান প্রযোজ্য হত, তাহলে একজন আইনজীবী হিসাবে আমি নির্দিধায় বলতে পারি তিনি বেকসুর খালাস পেতেন।
নুরেমবার্গ, প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়া, রুয়ান্ডা, সিয়েরালিয়ন, কম্বোডিয়া, লেবাননসহ দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বিগত ৭০ বছরে অনেকগুলো যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকল ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশ্য ছিল বিচারকার্য পরিচালনার মাধ্যমে জাতির একটি ক্ষত নিরাময় করা এবং জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা। কিন্তু বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারই হচ্ছে এর একমাত্র ব্যাতিক্রম। ফলস্বরূপ জাতির মধ্যে বিভাজন আরও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচারের পক্ষে আমি ছিলাম এবং এই ধরনের বিচার হলে নিজামী ভাইসহ আরও অনেকেই যে নির্দোষ প্রমাণিত হতেন তাতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পরামর্শ অনুযায়ী একটি স্বচ্ছ বিচার কার্য পরিচালনা করা হত, তাহলে দেশ ও জাতি মাওলানা নিজামীর মত একজন মানুষের সেবা থেকে বঞ্চিত হত না। যার উত্তম স্বাক্ষর তিনি রেখে গেছেন কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয় পরিচালনার মাধ্যমে।
তিনি প্রশান্ত মনে ফাঁসির মঞ্চে আরোহণ করেছেন। কোন একটি ইসলামী দলের প্রধানের বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ দেয়ার এটাই প্রথম নজির। এর আগে ১৯৪৯ সালে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের প্রধান হাসানুল বান্না আঁততায়ীর হাতে কায়রোর রাজপথে নিহত হন। ১৯৬৬ সালে মিসরে সাইয়েদ কুতুবকে যখন ফাঁসি দেয়া হয় তখন তিনি ইখওয়ানের প্রধান দায়িত্বশীল ছিলেন না। ১৯৩১ সালে ইতালীর ঔপনিবেশিক শাসকরা যখন লিবিয়ায় ওমর আল মুখতারকে ফাঁসি দেয় তখন তিনি ইতালির ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রধান সেনাপতির ভূমিকা পালন করছিলেন। ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানের একটি সামরিক আদালত মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর বিরুদ্ধে ফাঁসীর আদেশ দিলেও পরবর্তীকালে তা মওকুফ করা হয়। অনুরূপভাবে ১৯৫৪ সালে ইখওয়ান প্রধান হাসসান আল-হুদাইবির বিরুদ্ধে ফাঁসীর আদেশ দেয়া হলেও স্বাস্থ্যগত কারণে তা মওকুফ করা হয়। কোন যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে এবং যুদ্ধকালীন সময়ে কোন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী না হয়ে মানবতাবিরোধী বা যুদ্ধাপরাধের অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার উদাহরণ দুনিয়ার ইতিহাসে এটাই প্রথম। ফাঁসির মঞ্চে আরোহণের পূর্বে তাঁর মানসিক অবস্থা কি ছিল তা জানা যায় তাঁর তৃতীয় ছেলে ড. নাঈম খালেদের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে। তিনি কারও প্রতি কোন ক্ষোভ প্রদর্শন করেননি, কাউকে দোষারোপ করেননি। এটাই প্রমাণ করে তিনি কত বড় মাপের মানুষ এবং ধৈর্যশীল ছিলেন। খালেদের লেখা পড়ে সূরা ইবরাহিমের ১২নং আয়াতের কথায় আমার মনে পড়ে, যেখানে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর আমরা আল্লাহরই ওপর কেন ভরসা করবো না, যখন তিনি আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেছেন!! তোমরা আমাদের উপর যে অত্যাচার করছ, তার জন্য আমরা সবর করবো এবং ভরসাকারীদের আল্লাহরই ওপরই ভরসা করা উচিত।”
ফাঁসির মঞ্চে চড়ে দুনিয়া থেকে বিদায়ের পূর্ব মুহূর্তে বিশ্বজাহানের মালিক প্রভু পরওয়ারদিগারের পথে শেষ যাত্রার যখন তিনি পথিক তখন তাঁর অনুভূতি কি ছিল, কি তিনি বলেছিলেন, কি প্রার্থনা করেছিলেন- দুনিয়াবাসীর তা জানার কথা নয়। তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই জীবনের ঐ শেষ মুহূর্তে মাওলানা নিজামী যদি বলে থাকেন- “হায়!! আমার জাতির লোকেরা যদি জানত আমার প্রভু আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।” (সূরা ইয়াসিন- ৩৬:২৭)।
শেষ বিচার শেষ হলে পরে যারা তাঁর সাথে মিলিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করবেন তারাই শুধু জানতে পারবেন তাঁর শেষ কথা কি ছিল।