বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর, ভাষা সৈনিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপকার, অসহায়-নিপীড়িত মাজলুম মানবতার বলিষ্ঠ কণ্ঠসর ছিলেন জননেতা অধ্যাপক গোলাম আযম।
কিভাবে দেশ থেকে সংঘাত-সংঘর্ষের পরিবর্তে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশ ও জাতিকে সামনে অগ্রসর করা যায় সেই চিন্তায় অনেক সময় দিতে হয়েছে এ বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদকে। ক্ষমতাসীনদের অধীনে নির্বাচন করলে দেশের নাগরিকরা তাদের ভোট পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারেনা। ভোট হয়তো দিল একটি মার্কার একজন প্রার্থীকে। কিন্তু বিজয়ী হয়ে গেলো যাকে সে ভোট দেয়নি অন্য মার্কার আরেকজন লোক। ফলে কালো টাকার মালিক ও পেশিশক্তির অধিকারী ব্যক্তিরা নির্বাচিত হয়ে দেশ শাসনের নামে দূর্নীতি, লুটতরাজ ও জনগণকে শোষণ করে তাদের অবৈধ শাসনকে প্রলম্বিত করার ফন্দি ফিকিরে ব্যস্ত থাকে। এর মোকাবেলায় গোটা জাতি যখন দিশেহারা, তখন বাংলাদেশের গণমানুষের বন্ধু অধ্যাপক গোলাম আযম জাতিকে এ হতাশার হাত থেকে উদ্ধার করে তাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রণয়ন করলেন কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা। যা ছিল পৃথিবীর নির্বাচনের ইতিহাসে একটি ইউনিক মডেল।
প্রথমে অনেকেই এটা বুঝার ক্ষমতাও রাখেননি। কিন্তু পরবর্তীতে জনগণের মধ্যে যখন এই মডেল ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে, তখন তৎকালীন প্রধান বিরোধীদল বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এই রুপরেখার ভিত্তিতে জামায়াতের সাথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার প্রস্তাব দেয়। যেহেতু জামায়াতের তৎকালীন আমীর, ভাষা সৈনিক, অধ্যাপক গোলাম আযমের উদ্ভাবিত কেয়ারটেকার এর প্রস্তাব মেনে নিয়ে এ দাবি আদায়ে জামায়াতের সাথে আওয়ামীলীগ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের প্রস্তাব করে, সংগত কারণেই জামায়াতও তাদের যুগপৎ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রস্তাবে সাড়া দেয়ার সিদ্ধান্তে উপনিত হয়। যেই রূপরেখা বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যবস্থায় চলমান রাখার জন্য আজও বাংলাদেশের জনগণ আন্দোলন করে যাচ্ছে।
অধ্যাপক গোলাম আযম রাহিমাহুল্লাহ আজ নেই কিন্তু তাঁর উদ্ভাবন, চিন্তা, আবিস্কার তাঁকে টিকিয়ে রাখবে শতাব্দী থেকে শতাব্দী। তিনি ছিলেন মুসলিম উম্মাহর একজন অভিভাবক। তথাকথিত যুদ্ধাপরাধী বিচারের নামে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে মিথ্যা অভিযোগে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বর্তমান ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার তাঁকে আমৃত্যু কারাগারে দেয়। ২০১৪ সালের ২৩শে অক্টোবর রাত ১০ টা ১০ মিনিটে পৃথিবীর সফর সমাপ্ত করে বাংলাদেশের তথা বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম সিপাহসালার মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার দরবারে অন্তরের অন্তস্তল থেকে দো’য়া করি, তিনি যেন আমাদের প্রিয় এই রাহবারের শাহাদাতকে কবুল করে অপরিসীম নিয়ামতে সিক্ত করেন এবং জান্নাতে সর্বোচ্চ মাকাম জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করেন। আমীন।।