ইসলামী আন্দোলন একটি গতিশীল আন্দোলনের নাম। জনগন যদি আস্থা রাখে দেশ আমরা ভালোমতোই চালাতে পারবো ইনশাআল্লাহ। তবে আল্লাহর একটি সুন্নাত আছে, তিনি সে সুন্নত অনুযায়ী যখন যাকে ভালো মনে করবেন, দায়িত্ব তাকেই দিবেন। প্রস্তুতি নেয়া আমাদের কাজ আর দায়িত্ব দেওয়া আল্লাহর কাজ।
আল্লাহ পাকের সুন্নত হচ্ছে, তিনি দায়িত্ব দেয়ার আগে বান্দাকে পরীক্ষা করেন। সে হিসেবে গত ৫ বছর আমরা যে ধরনের অনুকূল পরিবেশ পেয়েছি, আগামী ৫-১০ বছর আমাদের জন্য ততখানি অনুকূল নাও থাকতে পারে। পরিস্থিতি প্রতিকূল হয়ে উঠতে পারে।
আমরা আল্লাহর কাছে দুআ করছি। হে আল্লাহ, আপনি তো পরীক্ষা ছাড়া দায়িত্ব দেবেন না। আমাদের পরীক্ষাটা যেন হালকা মানের হয়। এ জমিনে ছাত্রশিবিরের কয়েকশ ভাই শাহাদাত বরণ করেছেন। টোটালি কয়েক হাজার মানুষ এ জমিনে শাহাদাতের নজরানা পেশ করেছেন। সে প্রেক্ষিতে আমরা দুআ করছি, আল্লাহ পাক যেন আমাদেরকে হালকা পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার তাওফিক দেন।
আগামী দিনে ইসলামী আন্দোলনকে যদি আল্লাহ পরীক্ষা করতে চান, আন্দোলনের কর্মীরা শক্ত আছে কিনা তা যাচাই করতে চান, তাহলে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে ময়দানে সাহসী হয়ে দাঁড়াতে হবে।
কোনো সন্দেহ নেই, বস্তুবাদি সভ্যতার জন্য ইসলাম সবচেয়ে বড়ো হুমকি। এটা আমরা কম বুঝলেও আমাদের প্রতিপক্ষরা ঠিকই বুঝে। তাই তারা মরণকামড় দিয়েছে। অনেকে বলছেন, এই শতাব্দী হবে জ্ঞানের শতাব্দী। যদি তাই হয়, তাহলে আমরা যারা মুসলিম আছি, আমাদের আসমানী কিতাবের প্রথম বার্তাই যেহেতু ‘পড়ো’- তাই ইনশাআল্লাহ আমরাই এ জ্ঞানের শতাব্দীর নেতৃত্ব দেবো।
শয়তান মানুষকে দুটো জিনিষের ভয় দেখিয়ে আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়ার জন্য ওয়াসওয়াসা দেয়। একটি হলো রিজিক। অথচ আল্লাহ বলেছেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন।” (সুরা আত তালাক: আয়াত ২-৩)
কাজেই রিজিকের পেছনে ছোটার দায়িত্ব আল্লাহর বান্দার কাজ হতে পারে না। তাই আমরা এ দায়িত্ব তার ওপর ছেড়ে দিয়ে আমরা আল্লাহর দ্বীনের পতাকা বহণ করার কাজ করে যাবো।
একজন রাসুলকে (সা.) প্রশ্ন করেছিলেন, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ কাকে বলে? রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর কালেমার পতাকাকে তুলে ধরার জন্য যে কাজ করা হয়- তাই হলো জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ “ আমরা সবাই এ কাজটিতেই নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে রাখবো।
শয়তান আমাদেরকে দ্বিতীয় যে ভয় দেখিয়ে ওয়াসওয়াসা দেখায় তাহলো মৃত্যুর ভয়। অথচ আল্লাহ বলেছেন, কারো মৃত্যু হয় না আল্লাহর ফায়সালা ছাড়া এবং তার সবই পবিত্র বইতে লিপিবদ্ধ রয়েছে।” (সুরা আলে ইমরান: আয়াত ১৪৫)
তাই মৃত্যু ভয়ে ভীত হওয়া ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের শোভা পায় না। এ কারণে মুসলিমরা ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও বলতে পারে, জীবন মৃত্যুর ফায়সালা আসমানে হয়, জমিনে নয়। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা যদি রিজিক ও মৃত্যুর ভয়কে জয় করতে পারে তাহলে তাদেরকে কেউ কাবু করতে পারবে না।
তৃতীয়ত, যে কথাটি বলা দরকার তাহলো, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা যে কাজই করবে তা যেন নিখুঁত হয়, উৎকৃষ্টতম হয়। কারণ, যাদের কাজ ভালো, জনগনও তাদেরকে ভালো মানুষ হিসেবেই ধরে নেয়। সর্বশেষ, আমাদের কাজের গতি যেন হয় প্রতিপক্ষের চেয়ে বেশি।
আমার সন্তানসহ সকলকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, ইসলামী আন্দোলন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলমান থাকবে। আল্লাহ যদি আমাদের সাথে থাকেন, তাহলে কেউ আমাদের পরাস্ত করতে পারবে না। তাই যতদিন আমি জীবিত আছি ততদিন আমি এ পতাকা বহণ করে যাবো, আমার পরে আমাদের ছেলেকে তারপর তার ছেলেকে এ পতাকা বয়ে নিয়ে যেতে হবে।
(২০০৫ সালে ছাত্রশিবিরের সদস্য সম্মেলনে শহীদ মীর কাসেম আলীর দেয়া অসাধারণ ভাষণ। এর ভিডিও এখন ফেসবুকে প্রচুর দেখা যায়। ভিডিও’র এক ধরনের আবেদন আছে । কিন্তু আমার শুনে মনে হয়েছে, একটা ডকুমেন্ট হিসেবে এ ভাষণটাকে সংরক্ষন করা দরকার। প্লাস, লেখনি হিসেবে থাকলে মানুষ সহজে শেয়ার করতে পারবে। এই ভেবে ট্রান্সক্রিপ্টটি করে ফেললাম। চার বছর আগে ২০১৬ সালের আজকের এ দিনে শহীদ মীর কাসেম আলী শাহাদাত বরণ করেছেন। আল্লাহ তার শাহাদাত কবুল করে তাকে জান্নাত নসিব করুন। আমিন। )