ইসলাম, মুসলিম ও মুমিন এ্ই তিনটি শব্দ একটি অপরটির সাথে অতোপ্রতোভাবে জড়িত,যার মূল লক্ষ্য হল ইসলামকে সমুন্নত রেখে একজন সত্যবাদী ও দায়িত্বশীল মুসলিম তার জীবনের সবটুকু দিয়ে মানবজতির সেবা করে প্রকৃত মুমিন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা।এ কাজের জন্য নিঃসার্থভাবে নিয়োজিত কর্মীদের মূল ও একমাত্র গন্তব্য হল জান্নাত,আর জান্নাতে যাওয়ার জন্য সর্বোত্তম পথ হল শাহাদাত বরণ করা।কারণ প্রতিটি জীবকেই একসময় মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে তাই মৃত্যুটা যেন হয় সম্মানজনক ও অনুসরণীয় এটি প্রতিটি প্রকৃত মুসলিমের আজন্ম সাধনা।অনেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে কান্না-কাটি করে এধরনের মৃত্যুকে খুঁজে বেড়ায় এবং দ্বীনের পথে অটল থেকে সে সাধনায় সার্বক্ষণিক ব্যস্ত থাকে কিন্তু মহান বিধাতা ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ যাকে এ সৌভাগ্যের জন্য মনোনিত করেন কেবল তাঁর দ্বারাই সম্ভব সে সুধা পান করা।সবার জন্য এটি প্রযোজ্য নয় কারণ আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ স: এর মাধ্যমে মহা মানব হওয়ার সকল রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র একটি পথ খুলেরেখেছেন যার নাম শাহাদাত,অর্থাৎ যিনি দ্বীনের উপর অটল থেকে সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বাতিলের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য নিজের জীবনকে আল্লাহর কাছে জামানত রেখে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে কালেমার রাস্তাকে সকলের জন্য মসৃণ করে দিয়ে যান তিনিই শহীদ তিনিই বীর।তিনি কোন সাধারণ মৃত মানুষ নয় আর আল্লাহ নিজেও এ মহান মনীষীদের কে মৃত বলতে বারণ করেছেন।মানুষের পক্ষে নবী হওয়া সম্ভব না হলেও নবীদের উত্তরসূরী হিসেবে খেলাফতের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে শাহাদতের মাধ্যমে নবীদের পাশে থাকা সম্ভব,এটিই চির সত্য ও শাশ্বত বাণী।কথাগুলো খুব সাদামাটা করেই বললাম যেন এর তাৎপর্যটি সহজেই বুঝা যায়।
উপরের কথাগুলো ইসলামী ভাবধারার তাৎপর্যপূর্ণ তাত্ত্বিক আলোচনার অংশমাত্র যার প্রায়গিক দিকটি বিশ্লেষণ করতে হলে খুলতে হবে আত্ম উৎসর্গর রক্তমাখা ইতিহাসের ভেজা পৃষ্ঠাগুলো;যেখানে পাওয়া যাবে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা (রহ:)এর পূর্বসূরীদের আত্মত্যাগের কঠিন সবক ও সরল জীবনচরিত।সেখানে খুঁজে পাই সৎ,একনিষ্ঠ ও সাধারণ জীবনযাপনকারী কিছু অসাধারণ মহামানবকে;যারা দেখতে সাদাসিদে হলেও চিন্তা-চেতনা ও আদর্শে ছিলেন অনেক উর্ধে।যার সূচনা হয়েছিল পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে পবিত্র মহামানব নবী-রাসূলদের মাধ্যমে,না না প্রকার কুট কৌশল প্রয়োগ করে সমাজের সাধারণ মানুষের চোখে ধুলা দিয়ে লাঞ্ছিত করে হত্যার ইতিহাস কোন নতুন ঘটনা নয়।পৃথিবীর সকল প্রান্তে এভাবে জীবন দিয়ে আজও চীর স্মরণীয় হয়ে আছেন অনেক বীর পুরুষ যারা আমাদের আদর্শ,আমাদের প্রেরণা।যাদের আত্মত্যাগ আমাদের কে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় কিভাবে সেদিন জেলখানার ভেতরেই বিখ্যাত নবী হযরত ইয়াহইয়া আ: এর দেহ থেকে মাথা আলাদা করে উপহার দেয়া হয়েছিল তৎকালীন বাদশার রক্ত পিপাসু নারী বান্ধুকে।শুধু নবীরাই নন বরং পরবর্তিকালে তাঁদের অনুসারীরাও এ ধরনের কৌশলি অত্যাচারের যাতাকলে পৃষ্ঠ হয়েছেন।ইতিহাস তাদের কে ক্ষমা করেনি যারা জগৎবিখ্যাত মহাপুরুষ ইমাম হযরত আবু হানিফা রহ: কে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করেছিল।আত্মত্যাগের এ মহিমান্বিত ঘটনা বিফলে যায়নি।যতবার ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা ইসলামের বিজয়ের খুব দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে ততবার জীবন বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা নিজেদেরকে হাসতে হাসতে বিলিয়ে দিয়েছেন সীরাতে মুস্তাকীমের পথে।পৃথিবীর ইতিহাসে যারাই ইসলামকে কোন প্রকার তোয়াক্কা না করে নিজেদের দাম্ভিকতার মাধ্যমে জোর করে ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে শয়তানের এজেন্ড হিসেবে ইসলামকে মুছে ফেলতে নির্মম নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রমূলক হত্যাকান্ডসহ যত প্রকার প্রপাগান্ডা চালিয়েছে তাতে ইসলামের বিজয় তরান্বিতই হয়েছে,আর অত্যাচারী গোষ্ঠী নিজেদের নাম লিখেদিয়েছে কলঙ্কিত ইতিহাসের জঘন্যতম অধ্যায়ের তৃতীয় সারিতে যার প্রথম দুই সারিতে রয়েছে ফেরাউন ও নমরুদ এর মতো আজন্ম পাপীদের নাম। এধরনের হত্যাকান্ডের সূচনা যেদিন থেকে শুরু হয়েছিল তার শিকার হয়ে অগ্রভাগে রয়েছেন বিভিন্ন নবী-রাসূল ও তাঁদের একনিষ্ঠ সহযোগী বা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীগণ;যাদের কুরবানীর ফলে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ কিয়ামত পর্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে তাদের নাম।যুগ যুগ ধরে মানুষ তাদের নামাজ,রোজা,হজ্জ,যাকাত,দান-খয়রাতে ও সেচ্ছায় গোপনে কিংবা প্রকাশ্য প্রার্থনার দ্বারা সে পথের অনুসারী হতে চাইবে। এ মহান নেতাদের রুহের মাগফিরাতের জন্য ভাড়া করে লোক জমা করানোর প্রয়োজন হয় না কারণ এটি ইমানের দাবী। আর এভাবেই চেষ্টা করা হয় তাদের ঋনের বোঝা নিজেদের ঘাড় থেকে কিছুটা হলেও কমানোর জন্য কেননা তাদের ঋণ তখনই শোধ হবে যখন এ পূণ্যভূমিতে কোরআনের পূর্ণ শাসনব্যবস্থা কায়েম হবে।
শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা রহ: আজ বিশ্বকে সাক্ষী রেখে গেলেন স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে ইসলামী আন্দোলনের জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের নেতা হিসেবে।ইসলামী আন্দোলনের জন্য যারা অকাতরে নিজের জীবন বিলিয়ে পূণ্যভূমিকে পবিত্র কোরআনের শাসন কায়েমের জন্য উর্বর করতে শাহাদত বরণ করছেন পরকালে এই বাংলাদেশি শহীদদের নেতৃত্ব দিবেন শহীদ আ: কাদের মোল্লা রহ:।বিচার দিবসের মহা প্রাপ্তির সেইদিনে বাংলাদেশের শহীদদের পরিচয় করিয়ে দিবেন শহীদ আ:কাদের মোল্লা রহ:।সেদিন হয়তো সাইয়্যেদ কুতব শহীদ রহ: সহ বিভিন্ন অঞ্চলের নেতৃত্বদানকারী শুহাদাগণ মুচকি হেসে শহীদ আ: কাদের মোল্লা কে উষ্ণ অভ্যর্থনার মাধ্যমে সম্মানিত করবেন।এভাবেই বেঁচে থাকবেন বাংলাদেশের আকাশে ক্ষণিকের জন্য উদিত এ ক্ষণজন্মা মহাপুরুষটি।কেননা দেশের মানুষের কাছে কিছুদিন পূর্বেও যে মানুষটি ছিল অনেকটাই অজানা কিংবা স্বল্প পরিচিত একটি নাম তিনি হয়তো নীরবে নিভৃতে সবসময় ইসলামী আন্দোলনের জন্য কেঁদে গেছেন,কেঁদেছেন কোরআনের শাসনের জন্য।মাত্র কয়েক দশকের জীবন নিয়ে মেঘে ঢাকা আকাশে জলে উঠা এ নক্ষত্রটি হঠাৎ করেই উঁকি দিলেন পৃথিবীময় আলোয় আলোকিত রঙ্গীন সূর্যের ন্যায়।এক সময় যে নক্ষত্রটিকে খুঁজে খুঁজে বের করতে হতো আজ তা নিজ আলোয় জগৎকে ক্রমেই আলোকিত করছে,সে আলো স্পর্শ করছে ব্যাথিত হৃদয়কে,জাগিয়ে তুলছে ঘুমন্ত নিথর দেহটিকে,নাঁড়া দিচ্ছে ভীত সংকিত ঘাপটিমারা বিবেককে।আশায় বুক বাঁধছে কোটি কোটি নিষ্পাপ চোখ যারা এখনও একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য পথ চেয়ে বসে আছে।নাসরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন করীব।
-মাহফুজ মুহাম্মাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়