বিশ্বের অগণিত মানুষের হৃদয় ফাটানো কান্না ও করুণ আর্তনাদের মধ্য দিয়ে বাংলার সবুজ জমিনকে নিজের শহীদি রক্তে রঞ্জিত করে জান্নাতের পথে পাড়ি জমালেন বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় মানুষের নন্দিত নেতা শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা।
বৃহস্পতিবার রাত ১০.০১ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদ- কার্যকরের নামে সরকার তাঁকে সুপরিকল্পিত হত্যার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছে।
আর কোনদিন তাঁর সাথে দেখা হবে না, কথা হবে না, তিনি আর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসবেন না। নেতা-কর্মীদেরকে গল্প বলে মাতিয়ে রাখবেন না। তাঁর সদা হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণবন্ত চেহারা আর কোনদিন আমরা দেখতে পাবো না।
স্ত্রী, পুত্র, সন্তানদের রেখে যিনি দিনের পর দিন আন্দোলনের জন্য ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে, তিনি তাঁর বিরতিহীন চলার গতিকে থামিয়ে দিয়ে চির বিশ্রামের স্থানে চলে গেলেন। আর কোন দিন তাঁকে শিবিরের সদস্য সম্মেলনে বুলবুলির গান পরিবেশন করতে দেখবো না। আমাদের চির পরিচিত “মোল্লা ভাই” এখন শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা।
মানবতার মুক্তির আদর্শ ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যিনি তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন, আল্লাহর পথে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তিনি মহিমান্বিত জীবনের অধিকারী হয়ে অনন্ত পথে পাড়ি জমালেন। ১৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর তিনি তাঁর পরিবারকে বলেছিলেন : “আমাকে মৃত্যুদ- প্রদান করায় অবাক হবার কিছু নেই। ইসলামী আন্দোলনে যেদিন যোগ দিয়েছি সেদিন থেকেই শহীদ হবার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি। জীবনের মালিক আল্লাহ। কখন কিভাবে কার মৃত্যু হবে তা দুনিয়ার কোন মানুষ, বিচারক বা সরকার কর্তৃক নির্ধারণ হয় না। তা নির্ধারণ হয় আল্লাহর সিদ্ধান্তে। আল্লাহ যেদিন যে সময়ে যেভাবে চাবেন সেভাবেই আমার মৃত্যু হবে। আমার জীবনের মালিক রাষ্ট্রপতি নন, মহান রাব্বুল আলামীন। সুতরাং রাষ্ট্রপতি বা কোন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রাণভিক্ষার প্রশ্নই আসে না।
তোমাদের প্রতি আমার নির্দেশ আমার পক্ষ থেকে পরিবারের কোন আত্মীয় বা সংগঠনের কোন লোক যেন প্রাণভিক্ষার আবেদন না করে। তোমরা মনে রাখবে যেদিন আব্দুল কাদের মোল্লা দুনিয়ায় এসেছিল সেদিন মাথা উঁচু করে এসেছিল। মৃত্যুর সময়ও কাদের মোল্লার মাথা উঁচু থাকবে। এ মাথা আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে কোনদিন নত হয়নি, হবেও না। আমি কোন অন্যায় করিনি। আমার বিরুদ্ধে আনীত সরকারের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। স্বাভাবিক মৃত্যুর মাঝে কোন গৌরব নেই। শহীদি মৃত্যু জীবনকে মহিমান্বিত, গৌরবান্বিত করে। আমি সেই গৌরবের মৃত্যু চাই।”
আব্দুল কাদের মোল্লা একাধারে একজন শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ। ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর সাথে আমার পরিচয়। সদালাপী, মিষ্টভাষী, অবিরত কথা বলার এক ব্যতিক্রমধর্মী ব্যক্তি ছিলেন শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা ভাই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে তাঁর সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছিল বিরোধীদের শিবির উৎখাত অভিযান। সেদিন তিনি বলেছিলেন, “মতিউর রহমান আকন্দ, কঠিন ময়দানে দায়িত্ব পালন করছে। মনে রাখবে যারা শহীদ হবার জন্য প্রস্তুতি নেয় তাদের বিজয় অনিবার্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমরা জীবন দিতে শিখেছো- তোমাদের বিজয় অনিবার্য।” তার সে বক্তব্য সত্যে পরিণত হয়েছে। শহীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আমি যখন ছাত্রদের ভোটে জোহা হল ছাত্রসংসদের ভিপি নির্বাচিত হলাম তার ২১ দিন পূর্বে শহীদ খলিলুর রহমান শাহাদাতবরণ করেন। ঐ সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল সংসদে পূর্ণ প্যানেলে আমাদের বিজয় গোটা দেশে ব্যাপক উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল। সেটা ১৯৯০ সালের কথা।
এর কদিন পরই মোল্লা ভাইয়ের সাথে দৈনিক সংগ্রাম চত্বরে সাক্ষাৎ। তিনি জড়িয়ে ধরে বললেন, বিজয় শুরু হয়ে গেছে। শহীদের রক্ত বৃথা যায় না। যে জমিনে শহীদি খুন ঝরে সে জমিনে আল্লাহর দ্বীনের বিজয় অনিবার্য।
এরপর অনেকদিন পেরিয়ে গেছে। ১৯৯৮ সালে কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব অর্পিত হয় আমার উপর। সেদিন কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলনে তিনি উপস্থিত ছিলেন। সদস্য সম্মেলনের সমাপনী দিবসে তাঁর মুখে পরিবেশিত হতো বুলবুলির গান। প্রতিটি সম্মেলনে তাঁর এ পরিবেশনা সদস্যদের মুগ্ধ বিমোহিত করতো। সেদিন তিনি প্রাণখুলে দোয়া করলেন। বললেন, “আল্লাহ তোমার যোগ্যতা বাড়িয়ে দিন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাও। বড় কঠিন সময় তোমার উপর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে।”
কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের ২য় সেশনের মাঝামাঝি সময়ে একদিন তিনি কেন্দ্রীয় অফিসে আমাকে ডাকলেন। তখন তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক। অনেক কথাই বললেন, শেষে কেন আমাকে ডেকেছেন তা ব্যক্ত করলেন। ছাত্রজীবন শেষে আমি কি করবো তা জানতে চাইলেন। সব জেনে বললেন, “কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালনের বিশাল জিম্মাদারী আঞ্জাম দেয়ার সুযোগ সবার হয় না। এ দায়িত্ব শেষ করে জামায়াতে যোগ দিয়ে প্রচার বিভাগে চলে আসো। আমি আমীরে জামায়াতকে তোমার কথা বলেছি।”
তাঁর এ কথার সাথে আমি একমত হতে পারছিলাম না। এ বিভাগের কাজের জটিলতা, ব্যাপ্তি ও কাজের ধরন অনুযায়ী এর কাঠিন্যতা উপলব্ধি করেই তাঁর সাথে একমত হতে পারছিলাম না।
ছাত্রজীবন শেষ হবার পর স্বাভাবিক সাংগঠনিক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করলাম। তখন মোল্লা ভাইয়ের নতুন দায়িত্ব আসলো। তিনি সংগঠনের সহকারী সেক্রেটরি জেনারেল হলেন। ২০০১-২০০৬ সময়টা ভালোই চললো। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় আমীরে জামায়াত ও সেক্রেটারি জেনারেল আমাকে অফিসে ডেকে এনে সহকারী প্রচার সেক্রেটারির দায়িত্ব অর্পণ করলেন। এর পরই দেখা মোল্লা ভাইয়ের সাথে “হেসে হেসে বললেন, আমিতো আগেই বলেছিলাম, এ বিভাগে আসতে। অবশেষে আমার কথাইতো বাস্তবায়ন হলো।”
তিনি আরও বললেন, তুমি সপ্তাহে দুদিন আমাকে কাজে লাগাবে। সে অনুযাযী তাঁর সাথে প্রতি সপ্তাহেই সাংবাদিক, রাজনৈতিক, যোগাযোগে বের হতাম। তাঁর যোগাযোগ ও সর্বমহলে পরিচিতি, গ্রহণযোগ্যতা দেখে আমি অবাক হতাম। এ মানুষটি সকল পত্রিকার সম্পাদকের নিকট কত প্রিয়, কত গ্রহণযোগ্য ছিলেন। এমন সম্পাদকদের নিকটও তিনি আমাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন, যারা আদর্শিকভাবে জামায়াতবিরোধী ছিল কিন্তু মোল্লা ভাইকে তারা হৃদয় মন দিয়ে ভালোবাসতেন। যার কারণে তিনি সাংবাদিকদের নেতা হতে পেরেছিলেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হতে পেরেছিলেন। সাংবাদিকদের উপর তার প্রভাব ছিল অনেক বেশী।
সম্পাদকদের সাথে সাক্ষাৎকালে প্রায় সময়ই তিনি বলতেন, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন। দেশের রাজনীতি ও নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি সর্বদাই উদ্বিগ্ন ছিলেন। প্রায়ই বলতেন, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি পরিচয় নিয়ে দাঁড়াবে? একটি সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণমূলক সমাজ বিনির্মাণে সদা তৎপর ছিলেন তিনি। তাইতো শাহাদাতের পূর্বেও তিনি বলেছিলেন, “আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও মহান রাব্বুল আলামীন ইসলামী আন্দোলন দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হেফাজত করুন।” এর চাইতে বড় দেশপ্রেম স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি ভালোবাসার আর কি নজির হতে পারে?
জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা অতি সাধারণ জীবনযাপন করেছেন। যারা তাঁকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন তারা প্রত্যেকেই একথা সাক্ষ্য দেবেন, খাবার-দাবার, চাল-চলন, বেশ-ভুষায় তিনি কত সামান্য ছিলেন। বেশি পাওয়ার আশা কখনো তাঁকে তাড়িত করেনি। হালাল পথে রুজি অর্জনের ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত দৃঢ় ছিলেন। শাহাদাতের পূর্বে ১০ ও ১২ ডিসেম্বর পরিবারের সদস্যগণ তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে পরিবারের সদস্যদেরকে তিনি বলেছিলেন, “তোমরা অল্পে তুষ্ট থাকবে। কখনো হালাল পথের বাইরে যাবে না। অপরের সমৃদ্ধি ও সচ্ছলতা দেখে নিজে সম্পদ অর্জনের তাড়নায় হারাম পথ অবলম্বন করবে না। যারা হালাল পথে থাকেন আল্লাহ তায়ালা কোন না কোনভাবে তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করেন। রিজিকের মালিক আল্লাহ, সুতরাং আল্লাহর উপরই ভরসা করবে।”
তাঁর জীবনে ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতা, রাগ, ক্ষোভ, গর্ব-অহংকার বা প্রতিহিংসার কোন স্থান ছিল না। এতবড় একজন রাজনীতিবিদ হওয়া সত্ত্বেও যে কোন পর্যায়ের মানুষের সাথে মিশতেন, কথা বলতেন, মনের ভাব প্রকাশ করতেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কর্মচারীদের প্রত্যেকেই একথা সাক্ষ্য দিবেন, তাঁর ভিতরে গর্ব-অহংকারের কোন বালাই ছিল না। তাঁর রাজনীতি ছিল গঠনমূলক। প্রতিপক্ষের শত জুলুম, নির্যাতন, প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি কোন ধরনের আক্রমণাত্মক, উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখেননি। তাঁর গোটা জিন্দেগীতে এ ধরনের নজির পাওয়া যাবে না। শাহাদাতের পূর্ব মুহূর্তে তিনি ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের উদ্দেশে যে আহ্বান রেখে গিয়েছেন তা তাঁর মহিমান্বিত জীবনের এক গৌরবদীপ্ত পরিচয় বহন করে। তিনি বলেছেন, “আমার শাহাদাতের পর ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা যেন ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেয়। তারা যেন কোন ধরনের ধ্বংসাত্মক বা প্রতিহিংসাপরায়ণ কর্মকা-ে লিপ্ত না হয়। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের কাছে এটাই আমার আহ্বান। আমি ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের উদ্দেশে বলছি, শাহাদাতের রক্তপিচ্ছিল পথ ধরে অবশ্যই ইসলামের বিজয় আসবে। আল্লাহ যাদের সাহায্য করেন, তাদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারে না। ওরা আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করে ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে চায়। আমি বিশ্বাস করি, আমার প্রতিফোঁটা রক্ত ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রাকে তীব্র থেকে তীব্রতর করবে এবং জালেম সরকারের পতন ডেকে আনবে। আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যেন ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা আমার রক্তের বদলা নেয়।”
তাঁর মহানুভবতা, অনুপম চরিত্র, নির্মল পরিচ্ছন্ন আত্মা ও কল্যাণকামিতার এক সীমাহীন দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন শহীদি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে। অসংখ্য, অগণিত ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ক্ষোভ, দুঃখ এবং বেদনা নির্বাপিত করতে তার এ বক্তব্য যুগ যুগ ধরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা ভাই ব্যক্তিগতভাবে একজন সাহসী এবং দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। আল্লাহর প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস, আস্থা এবং নির্ভরশীলতা। দ্বীনের জন্য জীবন দিতে সবসময় তিনি প্রস্তুত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা তথাকথিত মানবতাবিরোধী অভিযোগের মিথ্যা মামলায় বিচার নামক প্রহসনে ডিফেন্স টিমের একজন সদস্য হিসেবে পুরো সময়টি একেবারে কাছে থেকে জানার, বুঝার সুযোগ হয়েছে।
সাড়ে ৩ বছরের কারাবাসে তিনি একটি দিনের তরেও পরিবার, পরিজন, আত্মীয়-স্বজন অথবা তার সন্তানদের নিয়ে সামান্য সময়ের জন্যও বিচলিত হননি। অথচ এ পরিবারটির উপর যে সীমাহীন জুলুম এবং নির্যাতন হয়েছে তা নজিরবিহীন। তাঁর সন্তান, মেয়ের জামাই, নিজের স্ত্রী, সবাইকেই এ জালেম সরকার গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে দিনের পর দিন কারাগারে আটক রেখেছিল। তখন কারাভ্যন্তরে বন্দি থেকে তিনি সবকিছু শুনেও অত্যন্ত দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন। যখন তাঁকে ট্রাইব্যুনালে আনা হতো আইনজীবী হিসেবে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে সবকিছুই তাঁকে জানানোর এবং তাঁর কথা শুনার সুযোগ হতো। তাঁর পরিবারের কথা উঠলেই তিনি বলতেন, “ওসব নিয়ে আমি মোটেই চিন্তিত নই। আমাকে আমার ব্যক্তিগত অপরাধের জন্য সরকার আটক করেনি। আমাকে আটক করে মিথ্যা মামলা দিয়ে এই বিচারের নামে প্রহসনের আয়োজন করা হয়েছে, যেহেতু আমি ইসলামী আন্দোলনের কর্মী।
আমি মহান আল্লাহ তায়ালাকে আমার অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছি। তাঁর দ্বীন কায়েমের অপরাধে আমাকে কারাগারে আটক করা হয়েছে। সুতরাং আমার পরিবারের ভবিষ্যৎ কি সেটা নির্ধারণ করবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। আমি ভাবছি ইসলামী আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে। এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, কিভাবে তার মোকাবিলা করে এ আন্দোলনকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যাওয়া যাবে সেটাই আমার ভাবনার বিষয়। যতদিন মুক্ত ছিলাম, অসংখ্য কাজের মাঝেও পরিবারের কথা আমার ভাবনায় ছিল। যখন অন্তরীণ তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমার পরিবারের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছেন। তাই এ বিষয়ে আমি ভাবি না।”
তার এ বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন তিনি শাহাদাতের পূর্ব মুহূর্তে। কারাগারে পরিবারের সদস্যগণ সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, “আমি তোমাদের অভিভাবক ছিলাম। আমার শাহাদাতের পর তোমাদের অভিভাবক হবেন মহান রাব্বুল আলামীন। তিনিই উত্তম অভিভাবক। তাঁর চেয়ে নির্ভরশীল অভিভাবক আর কে আছে? সুতরাং তোমাদের দুর্ভাবনার কোন কারণ নেই।”
তিনি তাঁর স্ত্রীর উদ্দেশে বললেন, “তোমাদের অভিভাবক আল্লাহ। তুমি পরিবারকে দেখাশোনা করবে মাত্র। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তোমার এ দায়িত্ব পালন শেষ হওয়ার পরই যেন আল্লাহ তায়ালা তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসেন।”
লেখকঃ কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সহকারী প্রচার সেক্রেটারী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।