বাংলাদেশে যুদ্বাপরাধ বিচারে প্রথম রায়-ফাঁসী কার্যকর হয় বিগত ১২ ডিসেম্বার-২০১৩,বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০টা ০১ মিনিটে। তার পর থেকেই আব্দুল কাদের মোল্লা ও কসাই কাদের বিতর্কটি জোরালোভাবে সামনে চলে আসে। শুরু থেকে ট্রাইব্যুনাল ও বিচারের বিভিন্ন ধাপে নানা কেলেংকারী ও অসংগতি; যুদ্বাপরাধ বিচারের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশ্বব্যাপী প্রায় সকল বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের আপত্তি এবং আন্তর্জাতিক মহলের অনুরোধ উপেক্ষা করে তড়িগড়ি রায় কার্যকর করায় সচেতন মহলে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। তদুপরি আপিলেট বিভাগের ভিন্নমত পোষনকারী বিচারপতির রায়,ফরিদপুরের সদরপুরবাসীর বক্তব্য, সাবেক আওয়ামী এম.পি. গোলাম মওলা রনির চ্যালেজ্ঞ ও ট্র্যাইব্যুনালে দেয়া আব্দুল কাদের মোল্লার জবানবন্দী দেখে বিবেক নাড়া দিয়ে ওঠে। প্রশ্ন উঠেছে- দায়মুক্তির নামে হতভাগা এ জাতীর ঘাড়ে ইতিহাসের কঠিনতম বোঝাটি কি চাপিয়ে দেয়া হয়নি?
কসাই কাদেরের জন্য কারো মনে দয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না কিন্তু কসাই কাদেরের নামে যদি সম্পূর্ণ জেনে শুনে রাস্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় মেধাবী-সৎ-যোগ্য রাজনীতিবীদ আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসী দেয়া হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রী-প্রধান বিচারপতি-এটর্নি জেনারেল অর্থাৎ সরকার-বিচারবিভাগ-প্রসিকিউশন সহ এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত কারও কোন ক্ষমা হতে পারে না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল হিসেবে না হলেও এমন কি সাংবাদিক নেতা অথবা বিশিস্ট বুদ্বিজীবি হিসেবে না হলেও ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার ভাষানচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামের মরহুম সানাউল্লাহ মোল্লার ছেলে হিসেবে আব্দুল কাদের মোল্লার এই জুডিশিয়াল কিলিং-রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ডের দৃস্টান্তমূলক শাস্তীর দাবী দেশের আপাময় সচেতন-বিবেকবান নাগরিকের হতে বাধ্য।
সুতরাং কসাই কাদের ও কাদের মোল্লা একই ব্যক্তি কি না ? এ প্রশ্নটি আজ খুবই মৌলিক হয়ে উঠেছে। এটি এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। কঠিন সত্যটি এই, আব্দুল কাদের মোল্লা আর কোন দিন ফিরে আসবেন না কিন্তু দূবৃত্তায়নের রাজনীতি থেকে আমাদের প্রিয় জন্মভ’মির মাটি ও মানুষের মুক্তির জন্য এ প্রশ্নের সুস্পস্ট জবাব পেতে হবে। মনে রাখতে হবে ‘সক্রেটিস-ইমাম আবু হানিফা-মেন্দারিসের’ দন্ডও তৎকালীন সর্বোচ্চ বিচার বিভাগ থেকেই প্রদান করা হয়েছিল। অতএব, বিচার বিভাগ তথা সুপ্রিম কোর্টের দোহাই দিয়ে পার পাওয়া যাবে না।
আব্দুুল কাদের মোল্লার পরিবার অথবা দলের চাইতেও যুদ্বাপরাধীর বিচারের পক্ষের সকল মহলের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে এ প্রশ্নের গ্রহনযোগ্য জবাব জাতীর কাছে তুলে ধরা। সরকার দলের বাইরের হয়েও এমিকাস কিউরীদের যারা দন্ড যাবজ্জীবন থেকে ফাঁসীতে রুপান্তরের সুযোগ করে দিয়েছেন-এ প্রশ্নে তাদের সরব ভ’মিকা থাকা অপরিহার্য্য কর্তব্য। দল নিরপেক্ষ বা সরাসরি দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় নেই মনে করে তাবৎ ইস্যুতে টকশোতে অথবা কলাম লিখে নাগরিক সমাজের যে অংশ জাতীকে গাইডলাইন দিতে অভ্যস্ত-এই ব্যাপারে জাতি তাদের যৌক্তিক বক্তব্য আশা করে। রাজনীতির ময়দানের সক্রিয় কুশিলব; যারা নিজেদের দেশপ্রেমিক ভাবেন অথবা বিরোধী দলের নেতৃত্বে সমাসীন রয়েছেন-তাদের সুনির্দিস্ট পদক্ষেপ একান্ত দাবী। আর এজন্য সংশ্লিস্টদের অবশ্যই নি¤েœাক্ত কতিপয় বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে–
১.ট্রাইব্যুনালে আব্দুল কাদের মোল্লার প্রদত্ত জবানবন্দী কি পড়ে দেখেছেন?
২.সদরপুরবাসীর অনুভ’তি ও জিজ্ঞাসা জানতে অথবা গোলাম মওলা রনি এম.পি.-র চ্যালেন্জ পরীক্ষা করতে সরেজমিন খোঁজ নিয়েছেন?
৩.সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাংগ রায়টা ভিন্নমত পোষনকারী বিচারপতির রায়ে উল্লেখিত অবজারভেশন সহ পড়ে দেখেছেন কি?
৪.খুনী-কসাই কাদের কি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ পরবর্তীতে শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্স্টার্সে ১ম শ্রেণীতে ১ম স্থান অর্জন করেছে?
৫. ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আওয়ামীলীগ সভানেত্রী-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর তেজগায়ে অব¯’িত প্রধানমন্ত্রীর সরকারী দপ্তরে কি মিরপুরের কুখ্যাত কসাই কাদেরের সাথে বৈঠক করে দেশ পরিচালনার জন্য পরামর্শ চেয়েছিলেন?
এ ধরনের মৌলিক প্রশ্নগুলো এড়িয়ে দায়সারা জবাব অথবা পুরো বিষয়টা বেমালুম ভুলিয়ে দেয়ার অপচেস্টা করে কোন লাভ হবে না। দেশের ষোল কোটি মানুষের বত্রিশ কোটি চোখ সব দেখে হ্রদয় দিয়ে অনুধাবণ করে যাচ্ছে; স্বকন্ঠে বলতে না পারলেও সঠিক সময়ে কাজের কাজটি করতে তারা কখনও ভুল করে না। ৩৬,৪৬,৫৬ ও ৭০ এর নির্বাচন থেকে সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচন আর ১৯০৫-১৯৫২-১৯৬৯- ও ১৯৯০ এর গণ আন্দোলন ও ,৭১ এ মহান স্বাধীনতায় বার বার এ ম্যাসেজটি তারা জানিয়ে দিয়েছে।
আব্দুল কাদের মোল্লা ও কসাই কাদের প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট মহলের নিরবতায় ক্রমাগত উদ্বেগ ও ক্ষোভ বাড়ছে দেশবাসীর মনে। সময় সময় বিবৃতির ঢেউ তুলতে পারলেও এ বিতর্ক অবসানে তদন্তের দাবী আজও কেন যথাযথভাবে উঠছে না? বিশ্বব্যাপী চরম বিতর্কিত চলমান বিচার প্রক্রিয়াটি বন্ধ করে আন্তজার্তিক সংশ্লিস্টতার দাবী তুলে ধরার সময় কি এখনও হয়নি? বিশেষ করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাস্সিরে কোরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীÑর মামলার শেষ রায় যখন একদম নিকটবর্তী ।
এ ক্ষেত্রে স্বীয় কর্তব্য-কর্মের সামান্যতম দূর্বলতায় জনগণের আদালতে কঠিন জবাবদিহীর মুখোমূখী হতে হবে। ষড়যন্ত্রের সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ জড়িতরাই শুধু নয়,জেনে বুঝে নিরব থেকে যারা প্রশ্রয় দিয়ে যচ্ছেন তাদেরও রেহাই মিলবে না। স্বৈরতন্ত্রের জুজুর ভয় অথবা ক্ষমতার অন্ধ মোহ কোন অজুহাতেই শেষ রক্ষা হবে না।
সিরাজুল ইসলাম শাহীন; লন্ডন; ১৪/০৪/২০১৪;রাত ৯.৩০ঘ:
প্রাক্তনঃ কেন্দ্রীয় দাওয়াতি কার্যক্রম সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির