জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমীর বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ মাওলানা আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ (৮৮) কারান্তরীণ অবস্থায় ইন্তিকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বন্দী প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ গতকাল রোববার সকাল সোয়া এগারটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি কাশিমপুর কারাগার-১ এ বন্দী ছিলেন।
মরহুমের পরিবার ও কারাগার সূত্র জানিয়েছে, কাশিমপুর (গাজিপুর) কারাগারে রোববার সকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ সকাল পৌনে ১১টার দিকে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে নিয়ে আসে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোয়া ১১টায় তার মৃত্যু হয়। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রোববার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে মাওলানা ইউসুফের বড় ছেলে মাহবুব রহমানের কাছে লাশ হস্তান্তর করেন কাশিমপুর কারাগারের ডেপুটি জেলার আবিদ আহমেদ। এ সময় তার বড় মেয়ের স্বামী ড. ওহাবও উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক শফিউজ্জামান ময়না তদন্ত সম্পন্ন করেন।
লাশ হস্তান্তরের পর ঢামেক থেকে জামায়াত নেতা ইউসুফের লাশ ধানমন্ডির ১০/এ গোলাম ভিলায় নেয়া হয়। এই বাড়ি থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো।
গতকাল রাত ৯টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ধানমন্ডি ঈদগাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে তার নামাজে জানাযার প্রস্তুতি চলছিল। পারিবারিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তাকে দাফন করা হবে জানা গেছে।
যথাযথ চিকিৎসা না দেয়ার অভিযোগ: মাওলানা একেএম ইউসুফ সংজ্ঞা হারানোর পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যথাযথ চিকিৎসা না দেয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ বড় ছেলের।
মাওলানা একেএম ইউসুফের ছেলে একেএম মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, রোববার সকাল সাড়ে আটটার দিকে কারা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে পিতার অসুস্থতার কথা জানায়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার কথা জানানো হয় এবং তারা হাসপাতালে অপেক্ষা করেন। তবে তাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন তিনি অচেতন ছিলেন এবং তারা কেউ কোন কথা বলতে পারেননি। হাসপাতালের ডাক্তাররা তাদের জানিয়েছেন তার পিতা স্ট্রোক করেছিলেন।
মাহবুবুর রহমান জানান, তাকে প্রথমে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হলে সেখান থেকে আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) এ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু আইসিইউতে কোন রুম খালি না থাকায় তাকে বারডেম অথবা ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানোর পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু তিনি বন্দী থাকায় এ বিষয়ে প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বারডেম বা ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো সম্ভব ছিলনা। সর্বশেষে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে রেখেই চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়া হয় এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
একই অভিযোগ করেন তার আইনজীবী এডভোকেট সাইফুর রহমান ও এইচএম তামীম।
বিএসএমএমইউ’র পরিচালক আব্দুল মজিদ ভুঁইয়া জানান, গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একেএম ইউসুফকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর ‘ব্লাড প্রেসার ও পালস’ (রক্তচাপ ও স্পন্দন) পাওয়া যাচ্ছিল না। হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সিসিইউতে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
ঢামেকে ময়নাতদন্ত : রোববার বিকাল ৪টা ৫৪ মিনিটে একটি নম্বরবিহীন সাদা রংয়ের মাইক্রোবাসে করে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে মাওলানা ইউসুফের লাশ ঢামেকে নেয়া হয়। সেখানে তার ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে বিএসএমএমইউতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মাহবুব উর রহমানের তত্ত্বাবধানে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন শাহবাগ থানার এসআই আনসার আলী।
সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চিকিৎসক এবং মৃত্যুর সময় উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অসুস্থতা এবং বার্ধক্যজনিত কারণে ইউসুফের মৃত্যু হয়েছে।
দুপুরে জামায়াত নেতা ইউসুফের লাশ কারাবিধি অনুযায়ী পোস্টমর্টেমের আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। একই সঙ্গে কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে, তা জানাতে কারা মহাপরিদর্শককে (আইজি প্রিজন) নির্দেশ দেয়া হয়।
বন্দী অবস্থায় প্রথম কোন জামায়াত নেতার মৃত্যু: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার চলছিল মাওলানা একেএম ইউসুফের। উভয় পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি এ মামলার যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ধার্য্য ছিল। গত বছর ১২ মে মাওলানা ইউসুফকে তার ধানমন্ডি বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর নির্দেশে। পরে তার মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২ এ হস্তান্তর করা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অধীনে ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধ তথা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারাধীন এবং বন্দী অবস্থায় এই প্রথম কোন জামায়াত নেতার মৃত্যু হল। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, মাওলানা ইউসুফ হাসপাতালে মৃত্যুর পর তার লাশ ময়না তদন্ত ছাড়া তারা ফেরত নিতে চায়। তখন কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ ফেরত নিতে হলে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি লাগবে। আসামী পক্ষে এডভোকেট গাজী এমএইচ তামিম এরপর দরখাস্ত নিয়ে যান ট্রাইব্যুনালে। ট্রাইব্যুনাল কারা কর্তৃপক্ষের নিয়ম মেনেই লাশ হস্তান্তর করার জন্য আদেশ দেন দুপুরের পর।
গাজী তামিম জানান, বৃদ্ধ বয়সে মাওলানা ইউসুফের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে লাশের ময়না তদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার জন্য আমরা ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন করি। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আবেদনের বিরোধিতা করেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সাধারণ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।
জীবনী : মাওলানা আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ ১৯২৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার রাজইর গ্রামের মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আজিমুদ্দীন হাওলাদার। তিনি তার পিতার তৃতীয় সন্তান। তিনি ১৯৪৯ সালের জুন মাসে ফাজিল প্রথম বর্ষে পড়ার সময় মোরেলগঞ্জ উপজেলার ফুলহাতা গ্রামের অয়েজদ্দীন মোল্লার কন্যা রাবেয়া
খাতুনকে বিয়ে করেন। এরপর ১৯৫০ সালে ঢাকা আলিয়া মাদরাসায় অধ্যয়নকালে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা উপমহাদেশের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তানায়ক সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদীর (র.) কয়েকখানা বই পাঠ করে লেখক ও তাঁর ইসলামী আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯৫২ সালে আলিয়া মাদরাসা থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে খুলনা আলিয়া মাদরাসায় প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। খুলনা আলিয়া মাদরাসায় কর্মরত অবস্থায় ১৯৫২ সালের জুন মাসে তিনি জামায়াতে ইসলামীর রুকন হয়ে রুকনিয়াতের শপথ নেন। তিনি বাংলাদেশীদের মধ্যে দ্বিতীয় রুকন ছিলেন। প্রথম রুকন ছিলেন মরহুম মাওলানা আব্দুর রহীম। ১৯৫৩ সালের প্রথম দিকে তিনি খুলনা আলিয়া মাদরাসা থেকে বিদায় নিয়ে কিছু দিনের জন্য ঢাকায় যান। ওই সময় তিনি জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশিত উর্দু বইয়ের বাংলা অনুবাদ করতেন। ‘শান্তিপথ’ ও ‘ইসলামের জীবন পদ্ধতি’ নামের দু’টি পুস্তিকা বাংলায় অনুবাদ করেন। পরে তিনি ঢাকা থেকে বরিশাল জেলার মঠবাড়ীয়া থানার উপকণ্ঠে অবস্থিত টিকিকাটা সিনিয়র মাদরাসায় প্রধান শিক্ষকের পদে যোগদান করেন। এখানে তিনি ৩ বছরের মতো কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি জামায়াতে ইসলামীর খুলনা বিভাগের (বৃহত্তর খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, বরিশাল ও পটুয়াখালী নিয়ে গঠিত) আমীরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে খুলনা শহরে আসেন। ১৯৫৮ সালের ৮ অক্টোবর আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক শাসন জারির আগ পর্যন্ত তিনি ওই দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি খুলনা আলিয়া মাদরাসার কর্তৃপক্ষের অনুরোধে অধ্যক্ষ হিসাবে আবার যোগদান করেন। ১৯৬২ সালে তিনি মাদরাসার অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে খুলনা ও বরিশাল আসন থেকে জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি প্রাদেশিক সরকারের গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতাত্তোর তৎকালীন সরকার তাকে গ্রেফতার করে এবং ২ বছর কারাভোগের পর ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি মুক্তি পান।
মাওলানা ইউসুফ ১৯৫০ সালে ঢাকার সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া থেকে ফাযিল পাস করেন। পূর্ব পাকিস্তান মাদরাসা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় সারা দেশে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। এ জন্য সরকারি বৃত্তিও পেয়েছিলেন। ১৯৫২ সালে তিনি রেকর্ড সংখ্যক নাম্বার নিয়ে কামিল পাস করেন।
বিবাহিত জীবনে তার ১১টি সন্তান হয়। এর মধ্যে ৩টি কন্যা সন্তান একেবারেই অপরিণত বয়সে মৃত্যুবরণ করে। বর্তমানে তার ৮ সন্তানের মধ্যে ৫টি কন্যা ও তিনটি পুত্র সন্তান রয়েছে। তার বড় ছেলে মাহবুবুর রহমান একজন ব্যবসায়ী, মেঝো মেয়ে হাছীনা খাতুন সৌদী প্রবাসী, মেঝো ছেলে মাসউদুর রহমান আমেরিকা প্রবাসী, তৃতীয় কন্যা শামীমা নাসরিন দুবাই প্রবাসী, তৃতীয় ছেলে মাসফুকুর রহমান আমেরিকা প্রবাসী, চতুর্থ কন্যা সাঈদা তানিয়া নাজনীন দুবাই প্রবাসী, সনিয়া শারমিন আমেরিকা প্রবাসী।
জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্ব পালন : ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৫৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মাওলানা একেএম ইউসুফ জামায়াতে ইসলামীর খুলনা বিভাগের আমীর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের নায়েবে আমীর হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ১৯৬২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ণ ৩ টার্মে সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় শূরার সদস্য ছিলেন। পরে তিনি স্বাধীনতাত্তোর ৩ টার্ম সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি নায়েবে আমীর এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সিনিয়র নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৭ সালে ১৪ জুন কৃষকদের সেবারব্রত নিয়ে সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চাষীকল্যাণ সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। মাওলানা একেএম ইউসুফ এই সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি ১৯৯৫ সাল থেকে দারুল আরাবীয়া হতে আরবী ভাষায় একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এটা ছিল বাংলাদেশের একমাত্র আরবি পত্রিকা। তিনি ‘মহাগ্রন্থ আল কুরআন কি ও কেন?’, ‘হাদীসের আলোকে মানব জীবন (প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ খ-)’, ‘আমার আমেরিকা, কানাডা ও ইংল্যান্ড সফর’, আমার আফগানিস্তান সফর’, ‘দর্পণ (নির্বাচিত প্রবন্ধ সমূহের সংকলন)’, ‘দেশ হতে দেশান্তরে (১৩টি দেশ এর ভ্রমণ কাহিনী)’, ‘কুরআন-হাদীসের আলোকে জিহাদ’, ‘মাওলানা মওদূদী ও জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতার অন্তরালে’ নামের বই প্রকাশ করেন।
মাওলানা একেএম ইউসুফ জীবদ্দশায় দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে ৪টি মহাদেশের ভারত, পাকিস্তন, আফগানিস্তান, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, আরব আমিরাত, ওমান, জর্দান, মিসর, সুদান, থাইল্যান্ড, সিংগাপুর, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, গ্রেট বৃটেন, আমেরিকা ও কানাডা ভ্রমণ করেছেন।
মোমতাজুল মুহাদ্দেছীন মাওলানা একেএম ইউসুফ এর সাথে কাতার ও কুয়েত সরকারের ছিল সুগভীর সম্পর্ক। তাঁর আমন্ত্রণে এ দুই দেশের একাধিক মন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছেন। কাতার ও কুয়েত সরকার তার কর্মকা-ের ওপর ছিল খুবই আস্থাশীল। যার কারণে ঢাকা, খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, ফরিদপুরসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চাষিকল্যাণ সমিতির উদ্যোগে এই দুই দেশের সরকারের অর্থায়নে মাওলানা একেএম ইউসুফ এর প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা ৪ শতাধিক মসজিদ, মাদরাসা ও এয়াতিমখানা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে।
মাওলানা ইউসুফ সম্পর্কে বড় ছেলের জবানবন্দী : মাওলানা ইউসুফের বড় ছেলে একেএম মাহবুবুর রহমান গত ৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে দেয়া জবানবন্দীতে বলেছিলেন, ’৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমার পিতা মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হলে আমরা পরিবারের সদস্যরা ঢাকা মিন্টু রোডে একই সঙ্গে বসবাস করতাম। ’৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মালেক মন্ত্রী সভার পদত্যাগের পর রেডক্রস ঘোষিত নিরপেক্ষ এলাকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আমার পিতাসহ আমরা পরিবারের সবাই আশ্রয়গ্রহণ করি। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের চার বা ৫ দিন পরে রেডক্রস কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। ১৯৭২ সালে আমার পিতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। সে মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদ- হয়। কিন্তু যেহেতু আমার পিতার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের অভিযোগ ছিল না সেজন্য ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার আওতায় আমার পিতাকে ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বরের পূর্বে মুক্তি দেয়া হয়। আমার পিতা অখ- পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন সত্য কিন্তু কোন অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে ২০০৯ সাল থেকে আমার পিতার বিরুদ্ধে কিছু মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।